শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের খবর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে এসেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান ‘খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্য নিয়ে খবর প্রকাশের কারণে শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে’—এমন শিরোনামে খবর প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ-এ প্রকাশিত খবর বলছে, ‘বিতর্কিত ডিজিটাল আইনে বাংলাদেশি সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
আল-জাজিরায় প্রকাশিত খবরের শুরুতে বলা হয়েছে, দেশে খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্য নিয়ে সমালোচনা করে খবর প্রকাশের কারণে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ওই খবরে আরও জানানো হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, মিথ্যা, বিভ্রান্তিমূলক ও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন করায় শামসুজ্জামানকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
ফ্রান্সভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এএফপির বাংলাদেশবিষয়ক ফ্যাক্ট চেক সম্পাদক কদরুদ্দীন শিশির আল–জাজিরাকে বলেছেন, প্রথম আলো ওই সংবাদে কোনো ভুয়া উক্তি ব্যবহার করেনি। তবে ফেসবুক পোস্টে প্রথম আলো ওই উক্তির সঙ্গে ভুল ছবি ব্যবহার করেছে।
আল–জাজিরার ওই প্রতিবেদনে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের গত মাসে প্রকাশিত তথ্যের বরাতে বলা হয়, দেশের নিত্যপণ্যের দাম বছরে গড়ে ১ থেকে ১৫১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। মাংসের দাম বেড়েছে গড়ে ৩৯ শতাংশ। চালের দাম ৩০ শতাংশ।
বাংলাদেশি থিঙ্কট্যাংক সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অব ইকোনমিক মডেলিংয়ের গতকাল বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে গত ছয় মাসে দেশের প্রায় ৯৬ শতাংশ এবং ৮৯ শতাংশ দরিদ্র মানুষ যথাক্রমে মাংস ও মাছ খাওয়া কমিয়েছে।
গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করার ঘটনায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগ ও সম্প্রতি বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ জানানো হয়।
এবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম আলোর সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিবেদনে এই আইন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়, নিউইয়র্কভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, আইনটি বাক্স্বাধীনতার ওপর আঘাত হেনেছে।
মালদ্বীপের সংবাদ সংস্থা সান-এ বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বাংলাদেশি সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এমন শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
গত ২৬ মার্চ প্রথম আলো অনলাইনের একটি প্রতিবেদন ফেসবুকে প্রকাশের সময় দিনমজুর জাকির হোসেনের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি ‘কার্ড’ তৈরি করা হয়। সেখানে উদ্ধৃতিদাতা হিসেবে দিনমজুর জাকির হোসেনের নাম থাকলেও ছবি দেওয়া হয় একটি শিশুর।
পোস্ট দেওয়ার ১৭ মিনিটের মাথায় অসংগতি নজরে এলে দ্রুত তা প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি প্রতিবেদন সংশোধন করে সংশোধনীর বিষয়টি উল্লেখসহ পরে আবার অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের কোথাও বলা হয়নি, উক্তিটি ওই শিশুর; বরং স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে, উক্তিটি দিনমজুর জাকির হোসেনের।
এ ঘটনার জেরে শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তেজগাঁও ও রমনা থানায় দুটি মামলা করা হয়। রমনা থানায় করা মামলায় শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে আজ আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই মামলায় গতকাল মধ্যরাতে আসামি করা হয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে।