ডায়াবেটিক রোগীর রুটিন যেমন হওয়া দরকার
২০১২ সালে ডায়াবেটিসকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ)। পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যদিও কিছু দেশ এই বৃদ্ধির হারকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে।
আফ্রিকার দেশগুলোর পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেই সবচেয়ে বেশি হারে ডায়াবেটিক রোগী বাড়ছে। বাংলাদেশের চিত্রটাও সুখকর নয়। আইডিএফের ২০২১ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, পাকিস্তানের পর বাংলাদেশেই ডায়াবেটিক রোগী সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রোগীর ৯৭ শতাংশেরই ‘ডায়াবেটিস টাইপ-২’। এ ধরনের ডায়াবেটিস প্রতিরোধযোগ্য। যথাসময়ে পদক্ষেপ নিলে এই রোগকে বিলম্বিত করা যায়। এ জন্য দরকার হয় না বড় কোনো আয়োজনের। রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের সহজ কিছু টিপস আছে। নিয়মিত এগুলো মেনে চললে নিজেরাই শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসকেরা রোগীদের একটি মডেল অনুসরণ করতে বলেন। সেটি হচ্ছে ‘থ্রি ডি’—ডায়েট, ডিসিপ্লিন ও ড্রাগ। অনেক চিকিৎসকের মতে, এই তিন ডির ভেতর ডিসিপ্লিন অর্থাৎ নিয়মানুবর্তিতা সবচেয়ে বেশি জরুরি। একজন ডায়াবেটিক রোগী নিয়ম মেনে জীবন যাপন করলে ডায়াবেটিস তো নিয়ন্ত্রণে থাকেই, একই সঙ্গে যাঁরা এখনো ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হননি, তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও অনেকাংশেই কমে যায়।
ডায়াবেটিসে কেউ আক্রান্ত হলে রোগীর জীবনধারা বুঝে চিকিৎসকেরা তাঁর খাদ্যতালিকা ঠিক করে দেন। একেক রোগীর ক্ষেত্রে খাদ্যতালিকা একেক রকম হয়। চলে আসে শরীরচর্চার প্রয়োজনীয়তাও। ভালো থাকতে সবচেয়ে জরুরি হলো নিয়মতান্ত্রিকতার ভেতরে জীবন যাপন করা। তাহলেই একজন ডায়াবেটিক রোগীর রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং এই রোগ থেকে অন্য কোনো রোগ শরীরে বাসা বাঁধে না।
নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলার জন্য সবার আগে দরকার একটি সুচিন্তিত ও কার্যকরী রুটিন। এই রুটিন কীভাবে গঠন করা উচিত? চিকিৎসকেরা বলছেন, প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া। যথাসময়ে খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হবে সব উপাদানের সুষম বণ্টন। আমিষ, স্নেহজাতীয় খাবার, শাকসবজি, দুধ, ডিম—সবকিছুই খেতে হবে। তবে দুধের ক্ষেত্রে একটু পাতলা দুধ এবং ‘লো-জিআই’যুক্ত দুধ খাওয়াই শ্রেয়। ডায়াবেটিক রোগীদের উপযোগী দুধজাতীয় অনেক পণ্য এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
এরপর আসে শরীরচর্চার প্রসঙ্গ। দিনের একটা সময় নির্ধারণ করা উচিত শরীরচর্চার জন্য। ভারী ধরনের শরীরচর্চা করা সম্ভব না হলে সারা দিনে অন্তত ৪৫ মিনিট হাঁটতে হবে। ডায়াবেটিসের রোগী যদি চাকরিজীবী হন, তাহলে মাথায় রাখতে হবে আরও কিছু বিষয়। যেমন একটানা অধিক সময় বসে কাজ করা যাবে না। কাজের ফাঁকে ফাঁকে উঠে দাঁড়িয়ে পায়চারি করতে হবে। হুটহাট কোনো কিছু খাওয়া যাবে না। একই সঙ্গে বর্জন করতে হবে ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবন। সাবধান হতে হবে বাইরের খাবার খাওয়ার ব্যাপারেও। কোমল পানীয়, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে। পান করতে হবে বিশুদ্ধ জীবাণুমুক্ত পানি।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল্লাহ বলেন, ‘ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ডিসিপ্লিন মেইনটেইন করাটা বেশি জরুরি। বিশেষ করে সুস্থতার অনেকটাই নির্ভর করে সঠিক সময়ে খাওয়াদাওয়ার ওপর।’
ডা. মো. সাইফুল্লাহ আরও বলেন, ‘দিনের একটা সময় ডায়াবেটিক রোগীদের একটু শরীরচর্চা করতেই হয়। হাঁটা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম। নিয়মিত স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।’