বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সমাবেশের অধিকার থাকা উচিত

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারছবি: ব্রিফিংয়ের ভিডিও থেকে নেওয়া

ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সমাবেশ করার অধিকারসহ মৌলিক অধিকারগুলো চর্চা করার সুযোগ থাকা উচিত বলে মনে করেন তাঁরা।

ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় সোমবার পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন ম্যাথিউ মিলার। সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেন, সাম্প্রতিক খবরে দেখা গেছে, বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িতদের সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এই ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক মতপ্রকাশের ওপর এর প্রভাবকে কীভাবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র?

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সমাবেশ করার অধিকারসহ মৌলিক অধিকারসমূহ চর্চা করার সুযোগ থাকা উচিত। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কে ক্ষমতায় আছে, তা কোনো বিষয় নয়। এই পোডিয়াম থেকে এবং (বাংলাদেশের সঙ্গে) দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় আমরা বারবার এ বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেছি।’

সারদায় প্রশিক্ষণরত আড়াই শতাধিক উপপরিদর্শককে (এসআই) চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গও উঠে আসে প্রশ্নোত্তরে। সাংবাদিক প্রশ্নে বলেন, বাংলাদেশে পুলিশের ২৫২ জন উপপরিদর্শককে (এসআই) চূড়ান্ত নিয়োগ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সব কর্মকর্তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ধর্মীয় বৈষম্যের বিষয়ে (মার্কিন) পররাষ্ট্র দপ্তরের কি কোনো প্রতিক্রিয়া আছে?

এ প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমি ওই প্রতিবেদন দেখিনি। তবে অবশ্যই আমরা বিশ্বাস করি যে বাংলাদেশে বা বিশ্বের যেকোনো জায়গায় সব ধরনের ধর্মীয় বৈষম্যের বিপক্ষে আমরা।’

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বৈষম্যহীন নিয়োগ নিশ্চিতে সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কীভাবে কাজ করছে, তা জানতে চান সাংবাদিক। জবাবে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘আমি একটু আগে যা বললাম, সেটাই। আমার নতুন করে বলার কিছু নেই।’

নিয়োগে ধর্মীয় বৈষম্যের যে অভিযোগ উঠেছে, তা যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না—সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘যে প্রতিবেদন আমি দেখিনি, তা নিয়ে আপনি আমার কাছ থেকে অনুমাননির্ভর কিছু জানতে চাচ্ছেন; কিন্তু আমি অনুমান করে কিছু বলব না।’

আরেক প্রশ্নে সাংবাদিক বলেন, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব। তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি সেক্রেটারি ভার্মা, আন্ডার সেক্রেটারি জন বাস ও অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুর পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (এনএসসি) ও বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন কমিশনের (প্রতিনিধিদের) সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আলোচনা নিয়ে কি আপনি কিছু বলতে পারেন? বাংলাদেশের সঙ্গে (যুক্তরাষ্ট্রের) সম্পর্ককে আপনারা নতুন করে কীভাবে দেখছেন?

জবাবে ম্যাথিউ মিলার জানান, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বলার মতো কিছু তাঁর কাছে নেই।

সাংবাদিক আরেক প্রশ্নে বলেন, ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় (বাংলাদেশ) ব্যাংকের গভর্নর অভিযোগ করেছেন, শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ধনকুবেররা তাঁর শাসনামলে দেশটির ব্যাংক খাত থেকে ১ হাজার ৭০০ কোটি (১৭ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার সরিয়েছেন। এটাকে বলা হচ্ছে ব্যাংক খাতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় লুণ্ঠনের ঘটনা। এই অর্থ পুনরুদ্ধার এবং বৈশ্বিক অবস্থান থেকে এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে আপনারা (যুক্তরাষ্ট্র) কীভাবে (বাংলাদেশকে) সহযোগিতা করতে পারেন?

জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘আমি (ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের) সেই প্রতিবেদনের সত্যতার বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারি না। তা ছাড়া এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়েও বলতে পারি না।’

আরও পড়ুন