একসঙ্গে ১০ পরিচালকের পদত্যাগ

বিনা ভোটে নির্বাচিত চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালকেরা অবশেষে ‘গণপদত্যাগ’ করছেন। আজ রোববার রাত সাড়ে ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১০ জন পরিচালক পদত্যাগ করেছেন। এর আগে পদত্যাগ করেন দুজন। বাকি ১২ জনের কাল সোমবার পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। চট্টগ্রাম চেম্বার সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

গত ৫ আগস্ট দেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর চেম্বার ঘিরে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ প্রকাশ্যে আসে। ব্যবসায়ীদের বঞ্চিত করে ‘পরিবারতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করার অভিযোগে ইতিমধ্যে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে আসছিলেন তাঁরা। এ পরিস্থিতিতে গত ২৮ আগস্ট জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তরফদার রুহুল আমিন ও পরিচালক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী পদত্যাগ করেন। এই দুজনের পদত্যাগের চার দিনের মাথায় আজ আরও ১০ জন পদত্যাগ করলেন।

একসঙ্গে ১০ পরিচালক পদত্যাগ করার সত্যতা নিশ্চিত করে চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ আজ রাতে প্রথম আলোকে বলেন, চেম্বার ঘিরে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে সাধারণ সদস্যদের সেবায় বিঘ্ন ঘটছে। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ ব্যবসায়ীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে বর্তমান বোর্ড পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে পদত্যাগ করা ১০ পরিচালকের নাম প্রকাশ করেননি চেম্বার সভাপতি।

ওমর হাজ্জাজ বলেন, ‘পরিচালকেরা চেম্বার সভাপতি বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দিচ্ছেন। আমি সভাপতি হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিচ্ছি। সোমবারের মধ্যে পদত্যাগের পুরো প্রক্রিয়া শেষ হবে।’

১১৮ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই চেম্বার থেকে প্রথম পদত্যাগের ঘটনা ঘটে ওমর হাজ্জাজের নেতৃত্বাধীন বোর্ডের মেয়াদে। গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর নতুন বোর্ড দায়িত্ব নেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে পরিচালক হিসেবে প্যাসিফিক জিনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর পদত্যাগ করেছিলেন। সেই রেকর্ড ভেঙে গেছে এবার। কারণ, এখন ২৪ জন পরিচালকের মধ্যে ১২ জন পদত্যাগ করেছেন।

জানতে চাইলে এখনো পদত্যাগ না করা চেম্বারের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদত্যাগপত্র প্রস্তুত করেছি। অফিস সময় শেষ হওয়ায় জমা দিতে পারিনি। কাল সকালে জমা দেব। সবার পদত্যাগের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রশাসক নিয়োগ করে নির্বাচনের আয়োজন করবে।’

পরিচালকদের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে আন্দোলনে থাকা বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘দেরিতে হলেও চেম্বারের বর্তমান বোর্ডের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। এখন ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও শুদ্ধিকরণ শেষে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা পূরণ হবে।’

চট্টগ্রাম চেম্বারে সর্বশেষ ভোটাভুটি হয়েছিল ২০১৩ সালের ৩০ মার্চ। ওই নির্বাচনে এম এ লতিফ-সমর্থিত মাহবুবুল আলম-নুরুন নেওয়াজ সেলিম পরিষদ ২৪ পদের মধ্যে ২০টিতে জয়লাভ করে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবাদে মাহবুবুল আলম প্রথমবারের মতো সভাপতি হন। এরপর টানা পাঁচবার ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সর্বশেষ বিনা ভোটের নির্বাচন হয় গত বছরের আগস্টে। প্রথমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিচালকেরা নির্বাচিত হয়েছেন, এরপর তাঁরা সভাপতি নির্বাচিত করেছেন। এতে সভাপতি হন ওমর হাজ্জাজ। তিনি চট্টগ্রাম-১১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) এম এ লতিফের তৃতীয় সন্তান। টানা ভোট না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছিল।

ব্যবসায়ীদের মূল দাবি হলো, চট্টগ্রাম চেম্বারে সুষ্ঠু নির্বাচন। এর আগে টানা পাঁচ নির্বাচনে ভোটাভুটি হয়নি চট্টগ্রাম চেম্বারে। গণপদত্যাগের ফলে এখন গণতান্ত্রিকভাবে ভোটাভুটির সুযোগ তৈরি হলো।