বাংলাদেশে নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্যাতন বন্ধের আহ্বান ইউনাইটেড অ্যাগেইনস্ট টর্চারের

নির্যাতনবিরোধী কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বয়ে ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুদানে ইউনাইটেড অ্যাগেইনস্ট টর্চার নামের কনসোর্টিয়াম গড়ে উঠেছে
ছবি: রেডরেসের ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত

জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নিপীড়নবিরোধী আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম ইউনাইটেড অ্যাগেইনস্ট টর্চার (ইউএটি)। নির্বাচনের আগে সহিংসতা বন্ধেরও আহ্বান জানিয়েছে তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার জোটভুক্ত সংস্থা রেডরেসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বাড়ছে। নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনাও বাড়ছে। রাজনৈতিকভাবে ভিন্নমতাবলম্বী ও মানবাধিকারকর্মীরা বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। একই সঙ্গে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর হামলা বেড়েছে। এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে ইউএটির স্বাক্ষরকারী সংস্থাগুলো রাষ্ট্রীয় সহিংসতা বন্ধ করতে এবং মানবাধিকার-সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।

নির্যাতনবিরোধী ছয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সমন্বয়ে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুদানে ইউনাইটেড অ্যাগেইনস্ট টর্চার নামের কনসোর্টিয়াম গড়ে উঠেছে। এ জোটের একটি সংগঠন হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল ফর টর্চার ভিকটিমস (আইআরসিটি)।

সংস্থাটির মহাসচিব লিসা হেনরি বলেন, ‘বাংলাদেশে কর্মরত আমাদের সদস্য বলেছেন, সেখানে নিপীড়নের মাত্রা বেড়েছে, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নিয়মিতই ক্ষুণ্ন হচ্ছে। নির্যাতনের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া মানুষদের ন্যায়বিচার ও চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে। জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য নিপীড়নের ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে আমরা বাংলাদেশে আমাদের সদস্য ও সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করছি।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘের কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চারে স্বাক্ষর করেছে ঢাকা। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন পাস হয়েছে। এ আইনের আওতায় নির্যাতনকে অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কমিটি অ্যাগেইনস্ট টর্চারকে (সিএটি) রিপোর্ট দিতে রাজি হয়নি বাংলাদেশ। একই বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অঙ্গীকার করেন, কোনো নিরীহ মানুষকে নিপীড়ন ও হয়রানির শিকার করা যাবে না।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থকদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। গত বছর বিরোধী দলের বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ বারবারই টিয়ার গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ছুড়েছে এবং তাদের লাঠিপেটা করেছে। এতে শত শত বিক্ষোভকারী গুরুতর আহত হন।

পুলিশের দাবি, বিক্ষোভকারীরাই প্রথমে তাঁদের ওপর হামলা করেছেন। তবে ঘটনার ভিডিও বিশ্লেষণ করে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, মেঝেতে শুয়ে থাকা অবস্থায়, নিরস্ত্র কিংবা দৌড়ে পালাতে থাকা বিক্ষোভকারীদের পিটিয়েছে পুলিশ। জাতিসংঘের বিধি অনুযায়ী, হুমকিপূর্ণ সহিংস আচরণ না করলে কোনো ব্যক্তিকে লাঠিপেটা করা যাবে না।