প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সারিকাইত এলাকায়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন। সিইসি পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটা কাজী হাবিবুল আউয়ালের নিজ এলাকায় প্রথম কোনো নির্বাচন। সিইসি নিজ এলাকার নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারবেন কিনা, প্রার্থীসহ সবার নজর এখন সেই দিকে।
তারা (প্রশাসন) এখন পর্যন্ত নিরপেক্ষ। ভোটের সময় কী হয়, সেটা পরে বলা যাবে। আশা করছি, ভোট সুষ্ঠু হবে।রফিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।
এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী চারজন। তাঁরা হলেন—আওয়ামী লীগের মাঈন উদ্দিন, একই দলের বিদ্রোহী রফিকুল ইসলাম, জাসদের আবুল কাশেম এবং স্বতন্ত্র মশিউর রহমান। ইতিমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাঈন উদ্দিনের প্রতি নিজেদের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন আবুল কাশেম ও মশিউর রহমান।
তাই সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদের এবারের উপনির্বাচনে লড়াই হবে মূলত আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাঈন উদ্দিন এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রফিকুল ইসলামের মধ্যে।
এটা সিইসির নিজের এলাকা। উনার একটা মান–সম্মান রয়েছে। আমরা চাই সুষ্ঠু ভোট হোক। জনগণ যাকে ভোট দেবে, সেই জিতবে।মাঈন উদ্দিন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
রফিকুল ইসলাম নির্বাচনে লড়ছেন আনারস প্রতীক নিয়ে। তাঁর প্রত্যাশা, শেষপর্যন্ত প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে। বুধবার তিনি বলেন, ‘তারা (প্রশাসন) এখন পর্যন্ত নিরপেক্ষ। ভোটের সময় কী হয়, সেটা পরে বলা যাবে। আশা করছি, ভোট সুষ্ঠু হবে।’
অন্যদিকে নৌকার প্রার্থী মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘এটা সিইসির নিজের এলাকা। উনার একটা মান–সম্মান রয়েছে। আমরা চাই সুষ্ঠু ভোট হোক। জনগণ যাকে ভোট দেবে, সেই জিতবে।’
মাঈন উদ্দিন স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও। আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. আলাউদ্দিনসহ সংসদ সদস্যের অনুসারীদের বড় একটি অংশ মাঈন উদ্দিনের পক্ষে রয়েছে।
অন্যদিকে রফিকুল ইসলামকে সমর্থন দিচ্ছেন এলাকার বর্তমান ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাবেক ও বর্তমান অনেক নেতা। তাঁদের বেশিরভাগই দলীয় রাজনীতিতে নিজেদের অবহেলিত ও বঞ্চিত মনে করেন। তাঁদের অভিযোগ, সন্দ্বীপে আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ সংসদ সদস্য, উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাতে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন রফিকুল ইসলাম। সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে তাঁকে বহিস্কার করা হয়েছে। রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার সঙ্গে সন্দ্বীপের সাধারণ জনগণ রয়েছেন। আওয়ামী লীগের অবহেলিত অংশও আছেন। সন্দ্বীপে আওয়ামী লীগের রাজনীতি সংসদ সদস্য ও উপজেলার দুই নেতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। দলকে বস্তাবন্দী করেছেন তাঁরা। এর বিপক্ষে আমার লড়াই।’
সিইসির নিজের এলাকার নির্বাচন। তাই এই নির্বাচনকে প্রশাসন ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’ হিসেবে নিয়েছে বলে মন্তব্য করলেন নৌকার প্রার্থী মাঈন উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘প্রশাসন নিরপেক্ষ আচরণ করছে। তাদের (প্রতিপক্ষ প্রার্থীর) অভিযোগের ভিত্তিতে আমার কয়েকজন কর্মীর বাড়িতে পুলিশ গেছে। গতকালও বিভিন্ন জায়গায় ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র্যাব এবং কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযান চালানো হয়েছে।
নির্বাচনের আগে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সুদীপ্ত সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশাসন শক্ত ও কঠোর অবস্থানে রয়েছে। কেউ ঝামেলা করার চেষ্টা করলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যৌথ অভিযান চালানো হয়েছে।’
সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এবারের উপনির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬১০। ৮৬টি কেন্দ্রে আজ সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। ভোটগ্রহণ হবে ব্যালট পেপারে।