প্রকল্প পরিচালককে মারধরে আ.লীগ-বিএনপির ১৫ ঠিকাদার
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আড়াই হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানীকে মারধরে নেতৃত্বে ছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন। বিএনপি সমর্থক এই ঠিকাদারের নেতৃত্বে হামলায় অংশ নিয়েছেন অন্তত ১৫ জন। তাঁদের মধ্যে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাসহ আওয়ামী লীগ সমর্থক ঠিকাদারও আছেন।
সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল দপ্তরের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। হামলাকারীদের মধ্যে সাতজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। সাহাবুদ্দিন ছাড়া অন্যরা হলেন মো. ফেরদৌস, মো. হাবিব, সুভাষ, সঞ্জয় ভৌমিক ওরফে কংকন, মো. নাজিম. ও মো. ফিরোজ। তাঁদের মধ্যে সঞ্জয় ভৌমিক কংকন চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাবেক পাঠাগার সম্পাদক, ফেরদৌস, সুভাষ ও হাবিব আওয়ামী লীগের সমর্থক। অন্য দুজনের রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে এই ঠিকাদারদের প্রকল্প পরিচালকের কক্ষে প্রবেশ করতে দেখা যায়। ফুটেজ দেখে তাঁদের শনাক্ত করেন সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা।
আজ রোববার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে নগরের টাইগারপাসে সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয় ভবনের চারতলায় প্রকল্প পরিচালকের কক্ষে এই হামলা হয়। এ সময় প্রকল্প পরিচালকের টেবিল ও নামফলক ভাঙা হয়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী রোববার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে প্রকল্প পরিচালকের ওপর হামলা করা হয়েছে। সাহাবুদ্দিনসহ হামলাকারী ঠিকাদারদের কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। আর অন্যান্য সংস্থাও যাতে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়, সে ব্যাপারে চিঠি দেওয়া হবে। আর এই ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
তবে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস এম কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি বিকেলে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন, আজ তিনি সিটি করপোরেশনেই যাননি। হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি অভিযোগ করেছেন, প্রকল্প পরিচালক সুনির্দিষ্ট কিছু ঠিকাদারকে কাজ দিয়েছেন।
আর ঠিকাদার ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সঞ্জয় ভৌমিক কংকন বলেছেন, তিনি করপোরেশনে গিয়েছিলেন। প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গেও দেখা করেছেন। কাজ না পেলে দরপত্র জমা দেওয়ার সময় যে পে-অর্ডার দিয়েছিলেন, তা ফেরত দিচ্ছেন না। কেন ফেরত দিচ্ছেন না, তা জানতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো হামলা বা মারধরের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। এই ঠিকাদার বলছেন, তাঁদের কাজ দেওয়া হয় না। সিটি করপোরেশনের ৩৭টি কাজের মধ্যে ৩০টি কাজ পেয়েছে দুটি প্রতিষ্ঠান।
গত বছরের ৪ জুন আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের আওতায় গত বছরের নভেম্বরে ২২০ কোটি টাকার ৩৭টি লটের দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দরপত্র উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং শেষ হয় ২৭ ডিসেম্বর।
দরপত্র উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু হলেও এখনো কাউকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি বলে জানান আক্রমণের শিকার প্রকল্প পরিচালক গোলাম ইয়াজদানী। তিনি বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, ঠিকাদারদের কাছ থেকে পাওয়া দরপত্র আবেদনের মূল্যায়ন কার্যক্রম চলছিল। মূল্যায়ন প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। কিন্তু কয়েকজন ঠিকাদার কাজ পাওয়ার তদবির করতে তাঁর কাছে আসতেন। তিনি তাতে সায় দেননি। তিনি ই-জিপি প্রক্রিয়া মেনে ম্যাট্রিক্স (ঠিকাদারদের প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক কাগজপত্র, টার্নওভার, কাজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে করা নাম্বারিং) পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করছিলেন। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ঠিকাদারেরা হামলা করেছেন। তবে তিনি কারও নাম জানেন না।
চাকরি জীবনে প্রথম এ ধরনের ঘটনার শিকার হলেন বলে জানান গোলাম ইয়াজদানী। তিনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী। গত বছরের ১৪ আগস্ট তাঁকে চট্টগ্রামের আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের পরিচালক পদে নিয়োগ দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ।
সিটি করপোরেশনের এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ২২০ কোটি টাকার কাজের জন্য এখনো ঠিকাদারদের কার্যাদেশ দেওয়া না হলেও মূল্যায়নে কারা কারা কাজ পাবে, তা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে অল্প কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই ৩৭টি কাজ পেতে যাচ্ছিল। কার্যাদেশ দেওয়ার আগপর্যন্ত বিষয়টি গোপন থাকার কথা থাকলেও তা অন্য ঠিকাদারেরা জেনে গেছেন।