সিকদার পরিবারের কয়েক সদস্যের সম্পদ জব্দের আদেশ আদালতের
শিল্পগোষ্ঠী সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রন হক সিকদার, তাঁর মা মনোয়ারা সিকদারসহ তাঁদের পরিবারের কয়েকজন সদস্যের স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মোট ১৫টি ভবন ও ফ্লোর জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহীম মিয়া আজ সোমবার এ আদেশ দেন।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মীর আহমেদ আলী সালাম প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান মনোয়ারা সিকদার। ব্যাংকটির সাবেক পরিচালক রন হক সিকদার ও তাঁর ভাই রিক হক সিকদার। তাঁরা প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংকটির বিপুল অর্থ লুট ও বিদেশে পাচার করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে ওঠে এসেছে।
রন হক সিকদার, তাঁর মা মনোয়ারা সিকদারসহ তাঁদের পরিবারের কয়েকজনের সম্পদ জব্দের আদেশ চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক জি এম আহসানুল কবীর। আবেদন থেকে জানা যায়, ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান, পরিচালনা পর্ষদ ও সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, নামে-বেনামে জনগণের অর্থ লুটপাটসহ মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। অনুসন্ধানে ন্যাশনাল ব্যাংকের মালিকপক্ষ জনগণের আমানত করা হাজার হাজার কোটি টাকা বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ দেওয়া ও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, অনুসন্ধানে গেছে সিকদার গ্রুপের মালিকপক্ষের বেশির ভাগ সদস্য বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। বিদেশে অবস্থান করে তাঁরা বিভিন্ন ব্যক্তিকে ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে অর্জিত অপরাধলব্ধ স্থাবর সম্পদগুলো বিক্রির চেষ্টা করছেন। এসব স্থাবর সম্পদ বিক্রি হয়ে গেলে রাষ্ট্রের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য এসব সম্পদ জব্দ করা দরকার। আবেদনে আরও বলা হয়, জনগণের আমানতের অর্থ আত্মসাৎ করে তাঁরা নিজেদের, পরিবারের সদস্যদের ও নিকট আত্মীয়দের নামে-বেনামে প্রচুর সম্পদ গড়েছেন। মালিকপক্ষ প্রভাব খাটিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের বিভিন্ন অফিস ভবন, এটিএম বুথসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার দেখিয়ে চুক্তিপত্র বা চুক্তিপত্র ছাড়া অস্বাভাবিক ভাড়া আদায় করেছেন। ভাড়া আদায় করা অর্থ সিকদার পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে।
রন হক সিকদারের আর অ্যান্ড আর হোল্ডিং, মাল্টিপ্লেক্স হোল্ডিং ও পাওয়ার প্যাক ইকোনমিক জোন, মনোয়ারা হক সিকদারের মালিকানাধীন সিকদার রিয়েল এস্টেট এবং নাসিক হক সিকদারের ন্যাশনাল ব্যাংকের হিসাবে বিধিবহির্ভূত বিপুল অর্থ জমা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে দুদকের আবেদনে।
আবেদনে রাজধানী ঢাকার কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে অবস্থিত ১২ কাঠা জমিতে ১৩ তলা ভবন জব্দের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এ সম্পদ ন্যাশনাল ব্যাংকের সঙ্গে ভাড়ায় চুক্তি করেন রন হক সিকদার। জমিসহ ভবনের মূল্য ৩২ কোটি টাকা। ভাড়ার অর্থ জমা হয়েছে রন হক সিকদারের আর অ্যান্ড আর হোল্ডিংস লিমিটেডের ন্যাশনাল ব্যাংকের হিসাবে।
এ ছাড়া রাজধানীর পিলখানায় সীমান্ত স্কয়ারের ৮ হাজার ৭৫১ বর্গফুট ফ্লোর ন্যাশনাল ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এই ফ্লোরের মালিক সালাউদ্দিন খান, যিনি পারভীন হক সিকদারের স্বামী। একইভাবে হাজারীবাগে সিকদার রিয়েল এস্টেট কোম্পানির ভবন ন্যাশনাল ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ ও প্রতিপালন বিভাগের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেন মনোয়ারা হক সিকদার।
এভাবে সিকদার পরিবারের সদস্য ও তাঁদের নিকটাত্মীয়দের নামে থাকা মোট ১৫টি ভবন ও ফ্লোর ন্যাশনাল ব্যাংকের বিভিন্ন কার্যক্রমে ভাড়া দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ ব্যাংক অর্থ তুলে নেওয়া হয়। এই ১৫টি সম্পদ ক্রোক করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মানের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ারদার, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের সব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিএমএম আদালত আজ এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, সাবেক সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ারদারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক।
অনুসন্ধানে দুদক জানতে পেরেছে, সোলায়মান হক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবগুলো থেকে অর্থ হস্তান্তর বা রূপান্তরের চেষ্টা হয়েছে।
দুদকের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান লিখিতভাবে আদালতকে জানান, সোলায়মান হক জোয়ারদারের ১৭টি ব্যাংক হিসাবে ১৩ কোটি ৮৩ লাখ ৫ হাজার ১৩২ টাকা জমার তথ্য পাওয়া গেছে। বর্তমানে হিসাবগুলোয় জমা থাকা অর্থের পরিমাণ ৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। বাকি অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সোলায়মান জোয়ারদারের নামে ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র থাকারও তথ্য পেয়েছে দুদক।
অন্যদিকে সোলায়মান হক জোয়ারদারের স্ত্রী আক্তারী জোয়ারদারের ১৩টি ব্যাংক হিসাবে ৭ কোটি ৬০ লাখ ৬৪ হাজার টাকা জমার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব ব্যাংক হিসাবে বর্তমানে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা থাকার তথ্য জানা গেছে।
এ ছাড়া সোলায়মানের মেয়ে তাবশিনা জান্নাতের পাঁচটি ব্যাংক হিসাবে ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা জমা থাকার তথ্য পেয়েছে দুদক। বর্তমানে এসব হিসাবে জমা রয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা।