সেপ্টেম্বরের দুই সপ্তাহের মতো ডেঙ্গুতে এত মৃত্যু আগে হয়নি

ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১৪ দিনে দেশে ডেঙ্গুতে যত মৃত্যু হয়েছে, আগের কোনো মাসের দুই সপ্তাহে এত মৃত্যু হয়নি। গড়ে এ মাসে প্রতিদিন ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগের কোনো মাসে গড়ে প্রতিদিন এত মৃত্যু দেখা যায়নি।

জুলাই মাসের শেষ দিক থেকে ঢাকার চেয়ে বাইরে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সপ্তাহখানেক ধরে ঢাকার চেয়ে বাইরে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে দ্বিগুণ হারে। আর ঢাকার পাশাপাশি বাইরের জেলাগুলোতে মৃত্যুও বেড়ে গেছে।

এ অবস্থায় দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৭৭৮ জনের মৃত্যু হলো। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল আটটা থেকে গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে ঢাকায় ছয়জন ও ঢাকার বাইরে পাঁচজন মারা গেছেন।

ডেঙ্গু যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তা নিয়ন্ত্রণে বাড়তি কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। অনেক কিছুই প্রকৃতির ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান, সাবেক পরিচালক, আইইডিসিআর

এ সময় ডেঙ্গু নিয়ে ২ হাজার ৬৬৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৯০০ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোয় ১ হাজার ৭৬৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

চলতি মাসের প্রথম ১৪ দিনে এডিস মশাবাহিত এ রোগে মৃত্যু হয়েছে ১৮৫ জনের। গত আগস্ট মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে মারা গিয়েছিলেন ১৬৫ জন। তবে আগস্ট মাসে এ সময়ে রোগীর সংখ্যা এ মাসের চেয়ে সামান্য বেশি ছিল।

চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডেঙ্গু যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তা নিয়ন্ত্রণে বাড়তি কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। অনেক কিছুই প্রকৃতির ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মশা নিয়ন্ত্রণ। সেখানে কার্যকর উদ্যোগ দেখছি না।’

এর আগে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছিল গত বছর—২৮১ জন। এ ছাড়া ডেঙ্গুতে ২০১৯ সালে মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের। ২০২০ সালে ৭ জন এবং ২০২১ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ১০৫ জনের।

আরও পড়ুন

এবার মৃত্যুহার এত বেশি হওয়ার কারণ কী—জানতে চাইলে অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এবার ডেঙ্গুর লক্ষণে কিছু পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। আগে যেমন জ্বরের পাশাপাশি গা ব্যথা, চোখ ব্যথা, রক্তা জমা বা র‌্যাশ—সেগুলো এবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে না।

পাতলা পায়খানা, কাশির মতো লক্ষণ এবার যুক্ত হয়েছে। লক্ষণে পরিবর্তন হওয়ায় ডেঙ্গু বুঝে ওঠার ক্ষেত্রে দেরি হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকেই দ্বিতীয়বারের মতো আক্রান্ত হচ্ছেন। আগে যে ধরনে আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি নতুন ধরনে আক্রান্ত হলে স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকি বেড়ে যায়।

অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান মনে করেন, ঢাকায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার দিকটি কিছুটা উন্নত হলেও ঢাকার বাইরে এ ব্যবস্থাপনা উন্নত নয়। সেটাও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ।

আরও পড়ুন