সোনাদিয়া দ্বীপে ইকো ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণের ইজারা চুক্তির কার্যক্রম স্থগিত

হাইকোর্ট ভবনফাইল ছবি

কক্সবাজারের মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের দুটি মৌজায় (সোনাদিয়া ও ঘটিভাঙ্গা) প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ও প্রজ্ঞাপিত বনভূমি ইকো ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণের জন্য ইজারা চুক্তির কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।

 এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার রুল ও নির্দেশনাসহ এ আদেশ দেন। প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ও বনভূমি ইজারা দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) গত ২৮ অক্টোবর রিটটি করে।

 হাইকোর্ট সোনাদিয়া দ্বীপের প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় গাছ কাটা ও চিংড়িঘের নির্মাণ বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে সোনাদিয়া দ্বীপের ৪ হাজার ৯১৬ হেক্টর ঘোষিত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ও ৮০০১ দশমিক ৭০ একর প্রজ্ঞাপিত বনভূমির ক্ষতি নিরূপণ করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভূমি পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা প্রস্তুত করে ছয় মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতেও বলা হয়েছে। পরিবেশসচিব, প্রধান বন সংরক্ষক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ আশরাফ আলী, তাঁকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী এস হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।

 রুলের বিষয়ে আইনজীবী এস হাসানুল বান্না প্রথম আলোকে বলেন, সোনাদিয়া ও ঘটিভাঙ্গা মৌজার ৮০০১ দশমিক ৭০ একর প্রজ্ঞাপিত বনভূমি ও ২ হাজার ৭১২ একর প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ইজারার জন্য চুক্তি এবং ৪ হাজার ৯১৬ হেক্টর প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ও ৮০০১ দশমিক ৭০ একর বনভূমি ধ্বংস-বাণিজ্যিক ব্যবহার থেকে রক্ষায় ব্যর্থতা কেন আইনি কর্তৃত্ব–বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। বনভূমি যথাযথ সংরক্ষণের জন্য বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর; বনভূমি ও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার যথাযথ সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার এবং ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা–ও জানতে চাওয়া হয়েছে। বনভূমি ও  প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে এবং ক্ষতি নিরূপণ ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। পরিবেশসচিব, ভূমিসচিব, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, প্রধান বন সংরক্ষক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বেলা জানায়, কক্সবাজারের মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপের ৪ হাজার ৯১৬ হেক্টর এলাকা ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। একই বছরের ৩ মে অপর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২১২১ দশমিক ৯৬ একর প্রজ্ঞাপিত বনভূমি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার আওতাবহির্ভুত করা হয়। এ নিয়ে ২০০৩ সালে বেলা একটি রিট করে। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০০৩ সালের ৬ জুলাই সোনাদিয়া দ্বীপের ৪ হাজার ৯১৬ হেক্টর এলাকায় ইজারা প্রদান বা দ্বীপ ধ্বংসকারী সব কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। রিটের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ আদেশ দেওয়া হয়।

 বেলা আরও জানায়, এ সত্ত্বেও সোনাদিয়া দ্বীপের ৯৪৬৬ দশমিক ৯৩ একর জমি (সোনাদিয়া মৌজার ৩১৯১ দশমিক ৭০ একর এবং ঘটিভাঙ্গা মৌজার চার হাজার ৮১০ একর) যার মধ্যে ২৭১২ একর প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা এবং ৮০০১ দশমিক ৭০ একর প্রজ্ঞাপিত বনভূমি ইকো ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণের উদ্দেশ্যে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের মধ্যে ২০১৭ সালের ৩ মে চুক্তি হয়। এই ইজারা চুক্তির বৈধতা নিয়েই রিটটি করা হয়।