নিরাপদ খাদ্য দিবস
রাস্তার খাবার নিরাপদ করতে উদ্যোগ নেই
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে রাস্তার খাবারের মান বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্ব থাকলেও মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম নেই।
স্বল্পমূল্য ও মুখরোচক বলে স্ট্রিট ফুড বা রাস্তার খাবারের জনপ্রিয়তা বেশি। রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন অর্ধকোটি মানুষ এমন খাবার খেয়ে থাকেন। অথচ ঢাকার প্রায় ৯০ শতাংশ রাস্তার খাবারে ক্ষতিকর জীবাণুর উপস্থিতি রয়েছে। এই রাস্তার খাবার নিরাপদ করতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্ব থাকলেও তাদের মাঠপর্যায়ে তেমন কোনো কার্যক্রম নেই।
বিশ্বের অনেক দেশেই রাস্তার খাবার তৈরি ও পরিবেশন করা হয় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে। বাংলাদেশে অধিকাংশ রাস্তার খাবার প্রস্তুত ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এসবের বালাই নেই। দূষিত পানি, ধুলাবালি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ অধিকাংশ রাস্তার খাবারকে করে তুলেছে অনিরাপদ। ফলে যে বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রতিদিন এসব খাবার খান, তাঁরা বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন।
যে সড়ক ও ফুটপাতে এসব খাবার বিক্রি হয়, সেগুলো ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে রাস্তার খাবার দোকানের নিবন্ধন বা অনুমোদন দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। রাস্তার খাবারের মান তদারকিতে বড় সমস্যা এগুলো ভ্রাম্যমাণ। কোনো কর্তৃপক্ষের কাছেই রাস্তার খাবার বিক্রেতাদের কোনো তালিকা নেই। খাবারের মান তদারকির দায়িত্বে থাকা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমও রাস্তার খাবারের ক্ষেত্রে একেবারেই সীমিত।
রাস্তার খাবারের মান নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) পুষ্টি বিভাগের সাবেক পরিচালক মনিরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দিন দিন রাস্তার খাবারের চাহিদা বাড়ছে আর মান কমছে। এসব খাবারে যে পানি ব্যবহার করা হয়, সেটা সবচেয়ে ভয়াবহ। বিপুলসংখ্যক মানুষ এই খাবার খেলেও এটি নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। এই খাবার মানুষের চিকিৎসা ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে।
আজ পালিত হচ্ছে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস। খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা বলছেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে রাস্তার খাবারের মান বড় চ্যালেঞ্জ। অভিযান, জরিমানা করে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন। রাস্তার খাবার নিরাপদ করতে সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন।
১৪০ ধরনের রাস্তার খাবার
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে, বিপণিবিতানের আশপাশে, অফিসপাড়া, বাণিজ্যিক এলাকাসহ অলিগলিতেও এখন নানা ধরনের রাস্তার খাবার পাওয়া যায়। নগরীর অনেক এলাকায় রাস্তার খাবারের অস্থায়ী দোকান বা ভ্যানও বসে। কিছু এলাকায় শুধু বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত রাস্তার খাবারের দোকান খোলা থাকে।
২০১৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাস্তার পাশে ১৪০ ধরনের রাস্তার খাবার বিক্রি হয়। জনপ্রিয় রাস্তার খাবারের মধ্যে রয়েছে ঝালমুড়ি, পিঠা, চটপটি, ফুচকা, চাটনি, মিষ্টি, বার্গার, ডিম, রুটি, পরোটা, পুরি, চিপস, মোয়া, শিঙাড়া, সমুচা, পেঁয়াজু, শরবত, ফলের রস, চা, কোল্ড কফি, হালিম, আইসক্রিম, নুডলস, খিচুড়ি, ভাত, কাবাব ইত্যাদি।
কারা খাচ্ছেন, কত মানুষ খাচ্ছেন
কেউ শখ করে রাস্তার খাবার খেয়ে থাকেন। আবার বিপুলসংখ্যক মানুষ নিতান্ত প্রয়োজনে এসব খাবার খেয়ে থাকেন। চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী, স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষ সুলভ মূল্যে এসব খাবার খেয়ে থাকেন। রাজধানীতে কত মানুষ রাস্তার খাবার খেয়ে থাকেন, তার সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই। তবে ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ৬০ লাখ মানুষ রাস্তার খাবার খেয়ে থাকেন।
সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাদ, সাধ্য এবং সময় বাঁচানোর খাতিরে লোকজন এসব রাস্তার খাবারের দোকানে ভিড় জমান। বিশেষ করে বাণিজ্যিক অফিস-আদালত এলাকায় স্বল্প আয়ের মানুষের অন্যতম ভরসা এসব খাবার। তবে বিভিন্ন এলাকায় বৈকালিক আড্ডা জমছে এখন রাস্তার খাবারের ভ্যানকে কেন্দ্র করে। সাশ্রয়ী দামে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা মানুষ এসব খাবার খাচ্ছেন।
শিক্ষার্থীরা বড় ক্রেতা
ঢাকার প্রায় সব স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বা কাছাকাছি রাস্তার খাবার বিক্রি হচ্ছে। ছুটি হতেই শিক্ষার্থীরা অনেকটা হুমড়ি খেয়ে পড়ে এসব দোকানে। সঙ্গে থাকা অভিভাবকদের অনেককেও এসব খাবার খেতে দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রাস্তার খাবারের অসংখ্য দোকান গড়ে উঠেছে। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি), মল চত্বর, কলাভবন, ব্যবসায় অনুষদের সামনে ভ্রাম্যমাণ এসব বিক্রেতা নানা ধরনের খাবার বিক্রি করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে পানিপুরি খাচ্ছিলেন দুই শিক্ষার্থী। তাঁদের একজন মুক্তার আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধুলাবালি পড়ে, পানি নিরাপদ কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন থাকেই। ছোটকাল থেকে রাস্তার খাবার এভাবেই বিক্রি হতে দেখছি। কখনোই শুনিনি সরকার এগুলোর মান নিশ্চিতে কোনো উদ্যোগ নিয়েছে।’
গবেষণায় জীবাণুর উপস্থিতি
রাস্তার খাবারের মান নিয়ে বিভিন্ন সময়ে একাধিক গবেষণা হয়েছে। এসব গবেষণার নমুনা মূলত রাজধানীর রাস্তার খাবারকেন্দ্রিক। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি), জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) রাস্তার খাবার নিয়ে গবেষণা করেছে।
সরকারের জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ২০১৭ সালের নভেম্বরে খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিক দূষণ ও জীবাণু সংক্রমণবিষয়ক সমীক্ষা প্রতিবেদন তুলে ধরে। তাতে দেখা যায়, ঢাকার ৯০ শতাংশ রাস্তার খাবারই অনিরাপদ। রাস্তার খাবারে ই-কোলাই ও সালমোনেলার মতো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর জীবাণু পাওয়া যায়। এর আগে ২০১৫ সালে আইসিডিডিআরবির এক গবেষণায় ৫৫ শতাংশ রাস্তার খাবারে ক্ষতিকর জীবাণু পাওয়া গিয়েছিল। আর ৮৮ ভাগ বিক্রেতার হাতে অস্বাস্থ্যকর জীবাণু থাকে।
বিএআরসির ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, রাজধানীর রাস্তার খাবারে বিপজ্জনক মাত্রায় টোটাল কলিফর্মস ও ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। এই ব্যাকটেরিয়া মূলত প্রাণীদের মলমূত্রে থাকে। ঢাকার পথে বিক্রি হওয়া ঝালমুড়ি, পানিপুরি, ভেলপুরি, চটপটি, নুডলস, ফলের রস, তেঁতুল-কাঁচাকলা-জলপাই-ধনেপাতা ও মসলা দিয়ে তৈরি মিশ্র ফলের ভর্তা, কতবেলভর্তা ও জলপাইভর্তা পরীক্ষা করে এই ফলাফল পায় সংস্থাটি।
বিএআরসির গবেষণায় রাস্তার খাবারের নমুনার প্রতি গ্রামে ১ হাজার ১০০টির বেশি টোটাল কলিফর্মস ও ই-কোলাই পাওয়া গেছে। অথচ প্রতি গ্রাম খাবারে ৩০টির ওপরে এই ব্যাকটেরিয়া থাকা বিপজ্জনক। খাবারের সঙ্গে মানুষের শরীরে তা প্রবেশ করলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। ডায়রিয়া, কলেরা থেকে শুরু করে নানা ধরনের রোগবালাই এর জন্য তৈরি হয়।
কেন অনিরাপদ রাস্তার খাবার
বিএআরসির গবেষণায় দেখা গেছে, রাস্তার খাবারে মূলত পানি থেকেই ব্যাকটেরিয়া যাচ্ছে। খাবার তৈরি, পরিবেশনের জন্য ব্যবহৃত পাত্র এবং আশপাশের ধুলাবালি থেকেও ব্যাকটেরিয়া খাবারে যায়। যায় বিক্রেতার হাত থেকেও।
রাস্তার খাবার তৈরির প্রক্রিয়া, রান্না, সংরক্ষণ, সরবরাহ—সব স্তরে খাবার দূষিত হয়। খাবার জীবাণুযুক্ত হওয়ার বড় কারণ অনিরাপদ পানির ব্যবহার। বিক্রেতার নোংরা হাত, গামছা, প্লেট ও কাগজেও জীবাণু থাকে। মাছি বা অন্যান্য কীটপতঙ্গের কারণেও দূষণ ঘটে। বিক্রেতা বারবার টাকা ধরার কারণেও জীবাণু ছড়ায়। রাস্তার খাবার যাঁরা বিক্রি করেন, তাঁদের বসার কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নেই। ধুলাবালি, রোগজীবাণু সহজেই খাবারে মিশে যাচ্ছে।
রাস্তার খাবার অনিরাপদ হওয়ার বড় কারণ বিক্রেতাদের অসচেতনতা। তবে শুধু বিক্রেতাদের দোষ দেওয়ার উপায় নেই। ভোক্তাদের সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে, সরকারি সংস্থাগুলোরও অবহেলা রয়েছে। রাস্তার খাবার বিক্রেতাদের ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করা কিংবা নিরাপদ পন্থায় খাবার বিক্রি নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেই।
সরকারি সংস্থাগুলোর উদ্যোগ নেই
২০১৫ সালে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩’ বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়। ‘জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য’-এ রূপকল্প সামনে রেখে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। কর্তৃপক্ষ কতটা সক্রিয়, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এই বিভাগের দায়িত্ব হচ্ছে, খাদ্যের বিশুদ্ধতা ও বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করা। তবে রাস্তার খাবারের মান নিয়ে এই কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম নেই বললেই চলে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের খাদ্যের বিশুদ্ধতা পরিবীক্ষণ ও বিচারিক বিভাগের পরিচালক সহদেব চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, রাস্তার খাবারের মান নিয়ে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো কাজ হয়নি। রাস্তার খাবার নিয়ে কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম পরিদর্শন ও পরিবীক্ষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করা হচ্ছে। প্রাপ্ত অভিজ্ঞতার আলোকে স্বাস্থ্যকর রাস্তার খাবার নিশ্চিতে বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হবে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে খাদ্য পরিদর্শক পদ থাকলেও তাঁরা রাস্তার খাবার নিয়ে কোনো কাজ করেন না। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের খাদ্য পরিদর্শক আবদুল খালেক মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাস্তার খাবার বিক্রেতারা ভ্রাম্যমাণ। তাঁদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। একবার কয়েকজনকে ভ্যান দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোরও ফলোআপ হয়নি।’ রাস্তার খাবার বিক্রেতাদের তদারকির আওতায় আনলে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিতে সুবিধা হবে বলে তিনি মনে করেন।
গড়ে উঠেছে ‘ফুডজোন’
রাস্তার খাবারের দোকান ঘিরে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় গড়ে উঠেছে ‘ফুডজোন’। খিলগাঁও, সিদ্ধেশরী, মোহাম্মদপুর টাউন হল, শ্যামলীর জাপান গার্ডেন সিটির সামনের সড়ক, আগারগাঁওয়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সামনের সড়ক, বাবর রোড মাঠের চারপাশ, মিরপুর ১০ নম্বর গার্লস আইডিয়াল স্কুলের সামনের সড়কসহ বেশ কিছু এলাকায় এমন ফুডজোন রয়েছে; যেখানে পাশাপাশি একাধিক ভ্যানে খাবার বিক্রি হয়।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আগারগাঁওয়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সামনের সড়কে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে ফুটপাত ঘেঁষে রাস্তার খাবার বিক্রির অর্ধশতাধিক দোকান গড়ে উঠেছে। অনেক দোকান কাচ দিয়ে ঘেরা, আবার অনেক দোকান উন্মুক্ত। সন্ধ্যার দিকে এসব দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ে। অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খেতে আসছেন এসব দোকানে।
দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ফুচকা ও চটপটি খাচ্ছিলেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আনিসুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কম দাম আর সহজে পাওয়া যায়—এ কারণে খেতে আসা। তবে এসব খাবার তৈরিতে কোন পানি ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটা তাঁদের জানা নেই।
‘স্ট্রিট ফুড ভ্যান’
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ‘ইম্প্রুভিং ফুড সেফটি ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় ২০১৫ সালে আইসিডিডিআরবির সঙ্গে একটি জরিপ পরিচালনা করে। সেখানে দেখা যায়, ঢাকায় ১০ হাজারের বেশি রাস্তার খাবার বিক্রেতা আছেন। এসব বিক্রেতার নিবন্ধন করা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসম্মত ভ্যানগাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়।
ঢাকায় রাস্তার খাবার বিক্রেতাদের নিবন্ধন করার কথা থাকলেও তা সম্পন্ন করা যায়নি। এই প্রকল্পের আওতায় নিরাপদ খাবার পরিবেশনের জন্য ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনে পরীক্ষামূলকভাবে ‘স্ট্রিট ফুড ভ্যান’ নামে এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় কাচ দিয়ে ঘেরা ৪০০ ভ্যান বিতরণ করা হয়। বিতরণ করা প্রতিটি ভ্যানে রান্নার জন্য চুলা, হ্যান্ড গ্লাভস, সাবান, জীবাণুমুক্ত পানির জন্য বিশেষ প্রযুক্তির ফিল্টারসহ আধুনিক খাবার তৈরির যাবতীয় ব্যবস্থা ছিল।
এসব ভ্যানের গায়ে লেখা ছিল ‘সৌজন্যে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, খাদ্য মন্ত্রণালয়’। এই কার্যক্রম খুব একটা কাজে আসেনি। প্রকল্প শেষ হতেই ভ্যানের চারপাশের কাচে ঘেরা অংশটি সরিয়ে ফেলেন অনেক বিক্রেতা। বর্তমানে এই ভ্যানগুলোর কী অবস্থা, সে বিষয়ে কোনো তথ্য নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাছে নেই।
সবাই চায় স্বাস্থ্যসম্মত খাবার
বিশ্বের অনেক দেশে পর্যটনের বিকাশে সেখানকার রাস্তার খাবারের ভূমিকা রয়েছে। সাশ্রয়ী হওয়ায় বিশ্বজুড়ে পর্যটকেরা রকমারি খাবারের স্বাদ নিতে রাস্তার খাবার বেছে নেন। জাপানের টোকিও, মরক্কোর মারাকেশ, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি, মিসরের কায়রো, ইন্দোনেশিয়ার বালি, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটি থেকে শুরু করে ভারতের মুম্বাই ও কলকাতার রাস্তার খাবার এসব দেশের তো বটেই, অন্য দেশ থেকে সেখানে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদেরও অন্যতম আকর্ষণ।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় রাস্তার খাবারের বিষয়টি উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। একটি শ্রেণির উপার্জনের মাধ্যম এই রাস্তার খাবার বিক্রি। আবার রাস্তার খাবারের কারণে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়বে—এটাও মেনে নেওয়া যায় না। এসব খাবার তৈরি ও পরিবেশন যাতে স্বাস্থ্যসম্মত হয়, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও বর্তমানে বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, অনেক দেশেই রাস্তার খাবার বিক্রির জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা আছে। আছে জীবাণুমুক্ত পানির ব্যবস্থা। মান নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিতভাবে তদারকি হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও রাস্তার খাবারকে নিরাপদ করা সম্ভব। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা ও আন্তরিকতা প্রয়োজন।
আমিনুল হক ভূঁইয়ার মতে, কেন খাবারগুলোতে জীবাণু থাকছে, এর প্রকৃত কারণগুলো অনুসন্ধান করা এবং সে লক্ষ্যে প্রতিকারের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। খাবার বিক্রেতাদের নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে। তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট স্থান বরাদ্দ দেওয়া হলে কর্তৃপক্ষের জন্য মান নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি করাও সহজ হবে।