চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের উন্নয়নকাজের গুণগত মান যাচাই-বাছাই করবেন সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন। ইতিমধ্যে উন্নয়নকাজের বিল হিসেবে যে ৫৪২ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে, সেগুলো যাচাই করার নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র। কাজের গুণগত মান ঠিক না থাকলে বিল পরিশোধ করা হবে না বলে জানান মেয়র।
আজ বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলী ও উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মেয়র শাহাদাত হোসেন এই নির্দেশ দেন। নগরের টাইগারপাসে সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় ঠিকাদারেরা অভিযোগ করেন, কাজ করার ক্ষেত্রে আগের কাউন্সিলররা ঘুষ নিতেন এবং ঘুষ না দিলে মেয়র-কাউন্সিলর মিলে কাজে বাধা সৃষ্টি করতেন। তবে মেয়র এখন কাউকে কোনো ধরনের ঘুষ দিতে নিষেধ করেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে ৪ থেকে ৫ মাস ধরে এই প্রকল্পের উন্নয়নকাজের বিল পরিশোধ করা হচ্ছিল না বলে অভিযোগ আছে ঠিকাদারদের। এ নিয়ে তাঁদের ক্ষোভ ছিল।
ঠিকাদারদের বিল এবং উন্নয়নকাজ নিয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের সঙ্গে সভা করেন সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র শাহাদাত হোসেন। এখন পর্যন্ত আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় ৫৪২ কোটি টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে। কাজের অগ্রগতি ৪০ শতাংশ।
সভায় মেয়র শাহাদাত হোসেন প্রকৌশলীদের উদ্দেশে বলেন, প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করে উপকরণ ও কাজের মান সম্পর্কে তাঁকে জানাতে হবে। যাঁরা ভালো কাজ করেছেন, তাঁদের বিল দেওয়া হবে। যাঁরা খারাপ কাজ করবেন, তাঁদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
ঘুষ নেওয়া কাউন্সিলরদের তালিকা দেওয়ার জন্য ঠিকাদারদের বলেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘যদি কোনো কর্মকর্তা আপনাদের কাছে টাকার ডিমান্ড (দাবি) করেন, সরাসরি আমার কাছে জানাবেন। তাঁকেও পানিশমেন্টের (শাস্তির) আওতায় আনব। এখানে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আপনারা সরাসরি কাজ করবেন, ভালো কাজ করবেন এবং এই ভালো কাজের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরকে আপনারা সুন্দর করে তুলবেন এবং একটা পরিচ্ছন্ন নগরে পরিণত করবেন। রাস্তা যখন আপনারা করতে যাবেন, সুযোগ থাকলে, প্রয়োজন থাকলে রাস্তার পাশে ডাস্টবিন করে দেবেন, গাছ লাগাবেন।’
বৈঠকে ঠিকাদারেরা দ্রুত বকেয়া বিল পরিশোধের দাবি জানান। এ ছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনায় আগে যেসব ঠিকাদার কাজ করতে পারেননি বা কাজ করলেও বিল ঠিকমতো পাননি, তাঁদের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
সভায় উপস্থিত ছিলেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক মো. আনিসুর রহমান প্রমুখ।