দেশে ফিরে কর্মসংস্থান তৈরি করছেন প্রবাসীরা
কুমিল্লার মো. নুরুদ্দিন আহমেদ বাহরাইন থেকে ফিরে এলাকায় খামার গড়েছেন। এখানে তিনি ৩৮ জনের কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন। বছরে ২০ লাখ টাকা নিজের আয় হচ্ছে তাঁর।
ময়মনসিংহের ভালুকার শিউলি ইসলামের স্বামী ইতালি থাকেন। তাঁর পাঠানো অর্থ বিনিয়োগ করে গরু-মুরগি-মাছের খামার করেছেন শিউলি। বছরে ১৫ লাখ টাকা আয় হয় এখন। ১০ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে খামারে।
দেশের অর্থনীতিতে এমন অবদান রাখার জন্য তাঁদের দুজনকে ‘সোনার মানুষ’ সম্মাননা দিয়েছে অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রামরু। ‘অভিবাসন ও সোনার মানুষ সম্মাননা ২০২৩’ শিরোনামে বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এই আয়োজনে তিনজন সোনার মানুষ, দুটি সোনার মানুষ পরিবার, মাঠপর্যায়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী কমিটি ও অভিবাসীদের কল্যাণে ভূমিকা রাখার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের একজনকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, অভিবাসীরা কী করেছেন আর কী করছেন, তার স্বীকৃতি দিতে হবে সব সময়। প্রবাসী আয়ের প্রায় ৫০ শতাংশ হুন্ডির মতো অনানুষ্ঠানিক খাতে আসে। এটা গ্রাম পর্যন্ত চলে যায় এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখে। তিনি আরও বলেন, ‘অভিবাসন খাত ঠিক করার জন্য জিহাদ (যুদ্ধ) ঘোষণা করেছি। কিন্তু সিস্টেমের জন্য তা এগিয়ে নিতে পারছি না। জিহাদের মানসিকতা আছে, কিন্তু সক্ষমতা কম।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, প্রবাসীরা শুধু দেশে নয়, কাজ নিয়ে যেসব দেশে যাচ্ছেন; সেখানকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। মধ্যপ্রাচ্যের অবকাঠামো গড়ে তুলছেন প্রবাসীরা। ওই সব দেশ এসব সুবিধা নিচ্ছে। কিন্তু বড় বড় ফোরামে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন, তা নিজের দেশে মানছেন না। কোনো কোনো দেশ অভিবাসীবিরোধী নীতি নিচ্ছে, এটা থেকে সরে আসতে হবে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, পাঁচ-ছয় বছর আগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রবাসী আয়ের ৪৮ শতাংশ আসে হুন্ডি হয়ে। এটিও অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে। আবার দেশে ফিরে প্রবাসীরা নানা বিনিয়োগ করে কর্মসংস্থান তৈরি করছেন। এসব করা হলে প্রবাসীদের ভূমিকা অনেক বেশি হবে। দক্ষ কর্মী পাঠাতে সরকার এখন কারিগরি শিক্ষায় জোর দিচ্ছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিবছর কর্মসংস্থানের খোঁজে যাঁরা আসে, তাঁদের ৪৫ ভাগ বিদেশে যেতে চান। তাঁদের জন্য সঠিক প্রক্রিয়া, নিরাপদ কর্মস্থল ঠিক করতে পারলে তাঁরা আরও বেশি অবদান রাখতে পারবেন।
সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বিদেশে কর্মী পাঠাতে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আগে উত্তরবঙ্গ থেকে তেমন কেউ বিদেশে যেতেন না। এখন অনেকেই কাজ নিয়ে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। প্রবাসীদের মধ্যে সচেতনতা খুব জরুরি।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত আলাদা আলাদা অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন সাবেক সচিব সেলিম রেজা, বিএমইটির মহাপরিচালক শহীদুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এম আহমেদ জামাল, অভিবাসনবিষয়ক বেসরকারি সংসদীয় ককাসের সাধারণ সম্পাদক মেহজাবিন খালিদ, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) বাংলাদেশ মিশন প্রধান আবদুস সাত্তার এসওয়েভ, ব্রিটিশ হাইকমিশনের প্রতিনিধি তাহেরা জাবীন প্রমুখ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী। সম্মাননা পেয়েছেন টাঙ্গাইলের নাজমুল তালুকদার, কুমিল্লার মো. নুরুদ্দিন আহমেদ, কেরানীগঞ্জের মো. সেলিম উল্লাহ, টাঙ্গাইলের উম্মে হাবিবা ও ভালুকার শিউলি ইসলাম।
করোনার সময় প্রবাসীদের কল্যাণে ভূমিকা রেখে সম্মাননা পেয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা মো. ফখরুল আলম। এ ছাড়া মাঠপর্যায়ে কাজ করা একটি কমিটিকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। এ কমিটি টাঙ্গাইলের পাইকরা ইউনিয়নে কাজ করে। যারা দালালদের কাছ থেকে প্রতারিত প্রবাসী কর্মীর টাকা তুলে দেওয়ার কাজ করে। সমঝোতার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৭৮ লাখ টাকা তুলে দিয়েছে তারা।