ভোক্তাদের দ্বারা অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বিষয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা–সম্পর্কিত প্রতিবেদন বেশি হয়।
‘২০১০-২০২১-এর মধ্যবর্তী সময় বাংলাদেশি সংবাদপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা–বিষয়ক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ’ শিরোনামের এক যৌথ গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা প্রবন্ধটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়। গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইসিডিডিআরবি, বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক গবেষণাটি করেছেন।
এক দশকে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদপত্রে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা-সংক্রান্ত সংবাদ কীভাবে প্রকাশ করা হয়েছে, তা জানার জন্য গবেষণাটি করা হয়। এ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা সম্পর্কে জনসাধারণের ধারণা ও সচেতনতা গঠনে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দেওয়া গবেষণাটির উদ্দেশ্য।
২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১২টি বাংলাদেশি দৈনিকের ২৭৫টি আধেয় (প্রতিবেদন, সম্পাদকীয় ও মতামত) বিশ্লেষণ করা হয় গবেষণায়। পত্রিকাগুলো হলো প্রথম আলো, ইত্তেফাক, যুগান্তর, কালের কণ্ঠ, সমকাল, জনকণ্ঠ, নয়া দিগন্ত, ভোরের কাগজ, ডেইলি স্টার, নিউএজ, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস ও ডেইলি সান।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা–সম্পর্কিত ৩২ দশমিক ২ শতাংশ প্রতিবেদন করা হয় ভোক্তাদের দ্বারা অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বিষয়ে। ২৯ শতাংশ সংবাদ ছিল চিকিৎসকের পরামর্শপত্র (প্রেসক্রিপশন) ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি নিয়ে। ২৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রতিবেদনে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের অতিরিক্ত ওষুধ দেওয়ার ঘটনা দেখা যায়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন ঘটনার ভিত্তিতে করা সংবাদের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৫ শতাংশ। যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা–সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেটি পত্রিকায় তুলে ধরা। এখান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা বিষয়ে বিস্তারিত জানার সুযোগ ছিল না। অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা মোকাবিলায় করণীয়–সম্পর্কিত সংবাদে যেসব সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে, সেগুলো পর্যাপ্ত নয়। তবে এসব বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন করা হলে তা জনগণের জন্য ইতিবাচক হবে।
আইসিডিডিআরবির হেলথ সিস্টেমস অ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিজ বিভাগের রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর এবং এই গবেষণার প্রধান গবেষক ছিলেন ডা. তাহমিদুল হক। তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা বিষয়ে সচেতনতা তৈরি ও জাতীয় কর্মপরিকল্পনা সমর্থন করতে গণমাধ্যমে সঠিক, বিস্তারিত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ সংবাদ প্রয়োজন। এর ফলে মানুষ যেমন সচেতন হবে, পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদেরও জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসা যাবে। বৈজ্ঞানিক তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে প্রতিবেদন লেখার পাশাপাশি বাংলায় আরও বেশি সংবাদ প্রকাশ করলে জনসাধারণের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতা নিয়ে বোঝাপড়ার উন্নয়ন হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৭ কোটির জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্যভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা বাড়ছে। অ্যান্টিবায়োটিকের উচ্চ প্রতিরোধ্যতা স্তরগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর হুমকির কারণ। কেননা, এর ফলে ওষুধের কার্যকারিতা সীমিত হয়ে যায়। ফলে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, উচ্চ চিকিৎসা ব্যয় ও মৃত্যুর হার বাড়ে। অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতার উচ্চ হার আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক হুমকি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, শুধু ২০১৪ সালে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা বিশ্বব্যাপী সাত লাখ মৃত্যুর কারণের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে প্রতিবছর এক কোটি মানুষ মারা যেতে পারে। শুধু এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশেই প্রায় ৯০ লাখ মানুষ মারা যেতে পারে। অর্থনৈতিকভাবে এই ক্ষতির পরিমাণ ২১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০৫০ সালে এই দুই অঞ্চলের জিডিপির ৭ শতাংশ। এ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা কাটিয়ে ওঠার চিকিৎসার প্রয়োজনে আনুমানিক ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারে, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আরও বাধা সৃষ্টি করবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ্যতা বিষয়ে প্রতিবেদনের সংখ্যা বাড়ানো হলে, বিশেষত বাংলা প্রতিবেদন বাড়াতে পারলে মানুষকে আরও সহজে সচেতন হতে সহায়তা করা যাবে। অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বাড়াতে কোনো প্রতিষ্ঠান চিকিৎসকদের কোনোভাবে প্রভাবিত করছে কি না, সেসব বিষয়ে অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন প্রতিবেদন করার সময় সাংবাদিকেরা স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারেন। এর ফলে প্রতিবেদনগুলোয় সর্বশেষ গবেষণার তথ্যাবলি প্রতিফলিত হবে। মানুষ আরও বিস্তারিত জানার সুযোগ পাবে।