বেনজীর দুদকে হাজির হননি, সময়ও চাননি
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হলেও তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) হাজির হননি। তবে তিনি একটি লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছেন। দুদক সূত্র জানিয়েছে, তিনি লিখিত বক্তব্যে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের সম্পদের অনুসন্ধান থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন।
দুদক সূত্র আরও জানায়, বেনজীর নিজের নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সম্পদকে বৈধ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, সম্পদের বৈধতার নথিপত্র তাঁর কাছে রয়েছে।
২১ জুন দুদকের কাছে লিখিত বক্তব্য পাঠান বেনজীর। দুদক সূত্র বলছে, চিঠিতে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হতে আর সময় চাওয়া হয়নি। এখন দুদক আর বেনজীর পরিবারের কাছে সম্পদের বিবরণী চাইবে না। সংস্থাটির অনুসন্ধানে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের যে বিপুল সম্পদ পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতে শিগগিরই মামলা করা হবে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল রোববার সংস্থাটির সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেন, বেনজীরের লিখিত বক্তব্য আমলে নেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।
দুদক সচিব আরও বলেন, অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বেনজীরের বক্তব্য শুনতে তাঁকে তলব করা হয়েছিল। গতকাল ছিল হাজির হওয়ার নির্ধারিত দিন। কিন্তু তিনি যথাসময়ে উপস্থিত হবেন কি না, সে বিষয়ে কমিশনকে কিছু জানাননি। তিনি দুদকে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য তুলে না ধরলে এবং তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা নির্ধারিত সময়ে দুদকে না এলে অনুসন্ধান দল আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
বেনজীর ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত ২৮ মে তলব করে দুদক। তাঁকে ৬ জুন এবং তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের ৯ জুন দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছিল। অবশ্য ৫ জুন বেনজীর আইনজীবীর মাধ্যমে ১৫ দিন বাড়তি সময় চেয়ে আবেদন করেন। ৪ জুন দুদকের কমিশনার জহুরুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, না এলে ধরে নিতে হবে তাঁর কোনো বক্তব্য নেই।
দুদকের অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত বেনজীর আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে ঢাকায় মোট ১২টি ফ্ল্যাট, বিভিন্ন জেলায় ৬৯৭ বিঘা জমি, ১৯টি কোম্পানির শেয়ার এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ও ৩টি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) পাওয়া গেছে। এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আদালতের ওই আদেশ আসার আগেই গত ৪ মে বেনজীর আহমেদ দেশ ছাড়েন।
বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র, যার মধ্যে বেনজীরের নামও ছিল।