ওয়ার্কশপে কাজ করতে গিয়ে হাত হারানো শিশু নাঈমের নামে ৩০ লাখ টাকা দেওয়ার রায় বহাল
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ওয়ার্কশপে কাজ করতে গিয়ে চার বছর আগে হাত হারানো শিশু নাঈম হাসান নাহিদের নামে ১৫ লাখ টাকা করে দুটি ফিক্সড ডিপোজিট করে দিতে এবং শিশুটির পড়ালেখার খরচ হিসেবে প্রতি মাসে সাত হাজার টাকা করে দিতে মালিকপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তা বহাল রয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ওয়ার্কশপমালিকের করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
নাঈমের হাত হারানোর ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে তার বাবা মো. নিয়ামুল হোসেন আনোয়ার হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৩১ জানুয়ারি হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে হাইকোর্ট শিশু নাঈমের নামে ১৫ লাখ টাকা করে ১০ বছর মেয়াদে দুটি ফিক্সড ডিপোজিট করে দিতে ওয়ার্কশপের মালিককে নির্দেশ দেন। প্রথমটি চলতি বছরের এপ্রিলে ও দ্বিতীয়টি ডিসেম্বরের মধ্যে করতে বলা হয়। একই সঙ্গে নাঈমের পড়ালেখার খরচ হিসেবে প্রতি মাসে সাত হাজার টাকা করে তার ব্যাংক হিসাবে জমা দিতে মালিকপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ওয়ার্কশপমালিক ইয়াকুব হোসেন লিভ টু আপিল করেন। এই লিভ টু আপিলের ওপর মঙ্গলবার শুনানি হয়। আদালতে লিভ টু আপিলকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফজলুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ওমর ফারুক।
পরে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ওয়ার্কশপমালিকের লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে হাইকোর্টের রায় বহাল রইল। হাইকোর্টের রায় অনুসারে শিশুটির নামে মালিকপক্ষ এখনো দুটি ফিক্সড ডিপোজিট করেনি। এমনকি শিশুটির লেখাপড়ার খরচ বাবদ কোনো টাকাও দেয়নি মালিকপক্ষ। আপিল খারিজ হওয়ায় হাইকোর্ট রায় বাস্তবায়নে মালিকপক্ষের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে।
নাঈমকে নিয়ে ২০২০ সালের ১ নভেম্বর প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। শিরোনাম ছিল ‘ভৈরবে শিশুশ্রমের করুণ পরিণতি’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, নাঈমের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা গ্রামে। তারা বাবা নিয়ামুল হোসেন আনোয়ার পেশায় জুতা ব্যবসায়ী। কর্মসূত্রে পরিবার নিয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বাস করছিলেন তিনি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হলে আনোয়ার কর্মহীন হয়ে পড়েন। সংসারের চাপ সামলাতে নাঈমকে তার মা–বাবা ভৈরবের একটি ওয়ার্কশপে কাজে দেন। ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ওয়ার্কশপে কাজ করতে গিয়ে নাঈমের ডান হাত ড্রিল মেশিনে ঢুকে যায়। পরে শিশুটিকে বাঁচাতে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কনুই থেকে তার ডান হাত বিচ্ছিন্ন করেন। সে সময় নাঈমের পরিবার ভৈরবের কমলপুর এলাকার নূর বিল্ডিং নামের একটি ভবনে ভাড়া থাকত। ভবনটির মালিক এলাকার ইকবাল হোসেন ইয়াকুব।