শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি আইএফইএক্সের
প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে কানাডাভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন এক্সচেঞ্জ (আইএফইএক্স)। পাশাপাশি প্রথম আলোর কর্মীরা যেন হস্তক্ষেপ বা ভয় ছাড়া কাজ করতে পারেন, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।
বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতে কাজ করা ১১৯টির বেশি সংস্থা ও সংগঠনের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক আইএফইএক্স। শনিবার রাতে আইএফইএক্সের এক টুইটে এসব দাবি জানানো হয়েছে। ওই টুইটে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) একটি বিবৃতি শেয়ার করা হয়েছে।
টুইটে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই অবিলম্বে ও নিঃশর্তভাবে সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে মুক্তি দিতে হবে, তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করতে হবে এবং হস্তক্ষেপ ও ভয়ভীতি ছাড়া প্রথম আলোর কর্মীদের প্রতিবেদন করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।’
আইএফইএক্স টুইটে সিপিজের যে বিবৃতি শেয়ার করেছে, তাতে সাংবাদিকতার কারণে প্রথম আলোর কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক সব তদন্ত বন্ধে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে প্রথম আলোর কর্মীদের অবাধে পেশাগত কাজ করতে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
ঢাকার সাভারে দায়িত্বরত প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান এখন কারাবন্দী। গত বুধবার ভোররাত চারটার দিকে তাঁকে সাভারের বাসা থেকে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। এর প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতে তোলা হয় এবং রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা একটি মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে এ মামলা হয় তাঁকে বাসা থেকে তুলে নেওয়ার ১৯ ঘণ্টা পর বুধবার মধ্যরাতে। মামলায় প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকেও আসামি করা হয়।
প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তার সাংবাদিক শামসুজ্জামানের মুক্তির দাবি জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ, নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (নোয়াব) বিভিন্ন মানবাধিকার, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠন এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনও এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন সরকারের আমলে নানা ধরনের হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়। এখনো তাঁর বিরুদ্ধে অর্ধশত মামলা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ প্রথম আলো অনলাইনের একটি প্রতিবেদন ফেসবুকে প্রকাশের সময় জাকির হোসেন নামের এক দিনমজুরের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি ‘গ্রাফিক কার্ড’ তৈরি করা হয়। সেখানে উদ্ধৃতিদাতা হিসেবে দিনমজুর জাকির হোসেনের নাম থাকলেও ছবি দেওয়া হয় একটি শিশুর। পোস্ট দেওয়ার ১৭ মিনিটের মাথায় বিষয়টি নজরে এলে দ্রুত তা প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি বিষয়টির সংশোধনী দিয়ে প্রতিবেদনটি আবার অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের কোথাও বলা হয়নি, উক্তিটি ওই শিশুর; বরং স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে, উক্তিটি দিনমজুর জাকির হোসেনের।
এই ঘটনার জের ধরে সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার এবং প্রথম আলোর সম্পাদকসহ তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেওয়া হয়।