কাতার আমিরের সফরে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে অগ্রাধিকার
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি আগামী সোমবার (২২ এপ্রিল) প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে আসছেন। প্রায় দুই দশক বিরতির পর কাতারের কোনো আমিরের এ সফরে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার থাকবে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর। দুই দেশের সম্পর্কের পরিধির বাইরে আমিরের এ সফর রাজনৈতিকভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সম্প্রতি নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছে কাতার। আর ইরান–ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাতের আবহে শেখ তামিমের ঢাকা সফরে আলোচনার অন্যতম বিষয় হতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি।
কাতারের আমিরের দুই দিনের সফরের প্রস্তুতি হিসেবে ১৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সমন্বয় সভা হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সফরের নানা বিষয়ের পাশাপাশি কয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে, তা চূড়ান্ত হয়েছে।
কাতার আমিরের সফরে এখন পর্যন্ত ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য চূড়ান্ত হয়েছে। সাধারণত এ ধরনের শীর্ষ পর্যায়ের সফরে সইয়ের তালিকায় থাকা চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে নতুন করে সংযোজন বা বিয়োজন হয়ে থাকে।
জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব মো. নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কাতার আমিরের সফরে এখন পর্যন্ত ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের জন্য চূড়ান্ত হয়েছে। সাধারণত এ ধরনের শীর্ষ পর্যায়ের সফরে সইয়ের তালিকায় থাকা চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে নতুন করে সংযোজন বা বিয়োজন হয়ে থাকে।
জানা গেছে, সইয়ের জন্য চূড়ান্ত হওয়া চুক্তির মধ্যে আছে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বন্দীবিনিময়, দ্বৈত কর প্রত্যাহার ও শুল্ক বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা। দুই শীর্ষ নেতার বৈঠক শেষে সইয়ের তালিকায় থাকা সম্ভাব্য এমওইউর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ থেকে কাতারে জনশক্তি রপ্তানি, ধর্মীয় বিষয়ে সহযোগিতা, বন্দর ব্যবস্থাপনায় কাতারের প্রতিষ্ঠান মাওয়ানির যুক্ততা, উচ্চশিক্ষায় সহযোগিতা ও কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণ।
ভারত ও থাইল্যান্ডের পর এবার কাতারের সঙ্গে বন্দীবিনিময় চুক্তি সই করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই মুহূর্তে ১০০ জনের বেশি বাংলাদেশি নানা ধরনের অপরাধে দণ্ডিত হয়ে কারা ভোগ করছেন কাতারে। দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের পর বন্দীবিনিময় চুক্তি হলে দণ্ডিত এই ব্যক্তিরা কাতার থেকে ফেরার পর সাজার বাকি মেয়াদ দেশে ভোগ করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, কাতারের বন্দর ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান মাওয়ানি বাংলাদেশে বন্দর ব্যবস্থাপনায় আগ্রহী। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানটি মহেশখালীর মাতাবাড়িতে নির্মাণাধীন বন্দরের ব্যবস্থাপনা করতে চায়। তবে বাংলাদেশ এখনই প্রতিষ্ঠানটিকে এ বন্দরের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে মাওয়ানি কাতারকে যুক্ত রাখার প্রেক্ষাপটে এ সফরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে একটি এমওইউ সই হবে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সম্প্রতি নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছে কাতার। আর ইরান-ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাতের আবহে শেখ তামিমের সফরে আলোচনার অন্যতম বিষয় হতে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের মার্চে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। এটি এখনো কার্যকর হয়নি। দেশটির আমিরের ঢাকা সফরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। ওই সমঝোতা স্মারকের আলোকে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের কাতারে কাজ করার কথা রয়েছে। এ মুহূর্তে কাতারের নৌবাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের একটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে। এর আওতায় কোস্টগার্ডের সদস্যরা কাতারে কাজ করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক জানান, ২০১৭ সালে আরব লিগ, বিশেষ করে সৌদি আরবের নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশগুলোর সঙ্গে কাতারের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছিল। ওই সময় কাতারের বিপক্ষে অবস্থান নিতে বাংলাদেশের ওপর সৌদি আরবের প্রবল চাপ ছিল। তখন বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছিল। কারণ, বাংলাদেশের জনশক্তির প্রধান বাজার সৌদি আরব হলেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কর্মী কাতারে কাজ করেন। ফলে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ওই সংকটে বাংলাদেশ কাতারের পাশে ছিল। ফলে দেশটি বাংলাদেশের ওপর সন্তুষ্ট।
এই কূটনীতিকের মতে, গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল বা জিসিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী কাতারের শীর্ষ নেতার এ সফর দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সহযোগিতার প্রেক্ষাপটে তাৎপর্যপূর্ণ।
২০০৫ সালে কাতারের তৎকালীন আমির হামাদ বিন খলিফা আল থানি বাংলাদেশে এসেছিলেন। প্রায় দুই দশক পর বর্তমান আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এ দেশে আসছেন।