বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যা বলছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামীকাল রোববার। কয়েক দিন ধরে এই নির্বাচন ঘিরে গুরুত্বসহকারে সংবাদ প্রকাশ করছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, আল-জাজিরার মতো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনাম হচ্ছে বাংলাদেশের নির্বাচন।
আগামীকাল ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের শিরোনাম ‘নির্বাচনের দিকে বাংলাদেশের রুগ্ণ গণতন্ত্র, একতরফা পদক্ষেপ’। গত শুক্রবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের শুরুটা করা হয়েছে এভাবে—বাংলাদেশে রোববার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় থাকতে যাচ্ছেন, সে বিষয়ে সন্দেহ কম। তবে দেশটিতে গণতন্ত্রের কতটুকু অবশিষ্ট থাকবে, সেটাই বড় প্রশ্ন।
নির্বাচনের আগের দিন আজ শনিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে স্বামীহারা এক নারীর গল্প। ওই নারী বিবিসিকে জানিয়েছেন, বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির একজন কর্মী ছিলেন তাঁর স্বামী। গত বছর তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। মাত্র ২৬ দিন পরই তাঁর ছেলেকে ফোন করে জানানো হয়, তাঁর বাবা কারাগারে মারা গেছেন। ওই নারীর ভাষায়, ‘আমার সন্তানকে এখন কে বাবার ভালোবাসা দেবে?’
বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেপ্তার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, বিএনপির ১০ হাজারের বেশি নেতা-কর্মী কারাগারে রয়েছেন।
নির্বাচন নিয়ে আরেক ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের শিরোনাম—‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর’। আজ প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববারের নির্বাচনে পঞ্চমবারের মতো বিজয়ী হওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন শেখ হাসিনা। তবে পর্যবেক্ষকদের ধারণা, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে পরীক্ষার মুখে পড়তে হতে পারে তাঁর সরকারকে।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ করে আসছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। গতকাল শুক্রবার সংবাদমাধ্যমটির শিরোনাম ছিল ‘নিষেধাজ্ঞা ও বর্জন: বাংলাদেশের নির্বাচনের ঝামেলাপূর্ণ ইতিহাস’। আল-জাজিরার ওই প্রতিবেদনে ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের ঘটনাবলি তুলে ধরা হয়েছে। আজ প্রকাশিত আল-জাজিরার আরেকটি প্রতিবেদনে শিরোনাম—‘ভোট গ্রাহ্য করা হয় না: পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্কের পরীক্ষা নিচ্ছে বাংলাদেশের “উদ্ভট” নির্বাচন’।
‘বাংলাদেশের নির্বাচনে অর্থনৈতিক দুর্ভোগের ছায়া’—শিরোনামে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হতে চাইছে। সমালোচনাকারীদের অভিযোগ, শেখ হাসিনা বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছেন এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে তুলছেন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ‘বাংলাদেশে নির্বাচন: শেখ হাসিনাকে কেন সমর্থন দিচ্ছে ভারত ও চীন’ শিরোনামে একটি বিশ্লেষণধর্মী লেখা প্রকাশ করেছে। দেশটির আরেক সংবাদমাধ্যম ডেকান হেরাল্ডের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ যখন ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে, তখন নির্বাচনের প্রকৃতি নিয়ে অনেক প্রশ্নই তোলা হচ্ছে।