দাবদাহের মধ্যে ‘কুয়াশা’র মতো এটা আসলে কী

আজ সোমবার সকাল ছয়টার দিকে হেডলাইট জ্বালিয়ে সড়কে চলছে যানবাহন। নান্দাইল, ময়মনসিংহ
ছবি: রমেশ কুমার

চলমান দাবদাহে দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে দিনভর থাকছে প্রখর রোদ, কাঠফাটা গরম। সেখানে ময়মনসিংহের কয়েকটি এলাকায় ভোরের দিকে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন আবহাওয়া। কুয়াশাঝরা শীতের সকালের মতো থাকে চারপাশ। একটু দূরেই আর কিছু দেখা যায় না। রাস্তায় গাড়ি চলতে হয় হেডলাইট জ্বালিয়ে। দুই দিন ধরে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়ক এবং ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলাজুড়ে এই আবহাওয়া অনেকের মধ্যেই কৌতূহল জাগিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু ওই এলাকাতেই নয়, সপ্তাহখানেক আগে কুমিল্লা, পরে ফেনী, বাগেরহাটসহ দেশের আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় ভোরের দিকে এমন আবহাওয়া দেখা গেছে। কেন এমনটা ঘটছে, তার ব্যাখ্যায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে কুয়াশার মতো যা দেখা যাচ্ছে, তাকে আসলে আবহাওয়াবিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘লো ক্লাউড’ বা নিচু মেঘ। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে গেলে সাধারণত এ ধরনের মেঘের সৃষ্টি হয়।

এ ধরনের আবহাওয়া কি শুধু বাংলাদেশেই দেখা দিচ্ছে, এটা কি একেবারেই নতুন কিছু—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশবিষয়ক সংস্থা নাসাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের আবহাওয়াবিষয়ক গবেষণা সংস্থার তথ্য খতিয়ে দেখা হয়। সেখানেও এক যুগ ধরে ‘গ্রীষ্মকালীন কুয়াশা’ নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ হাজির করা হচ্ছে। সেখানেও একই ধরনের কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের কয়েকজন আবহাওয়াবিদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা প্রত্যেকেই প্রায় একই উত্তর দিয়েছেন।

আবহাওয়াবিদ শাহীনুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও গ্রীষ্মকালে এ ধরনের নিচু মেঘ তৈরি হচ্ছে। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, মূলত সারা দিন প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে দেশের ভেতরের জলাশয় ও নদ-নদী থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প তৈরি হচ্ছে। আর বাতাসে স্বাভাবিকের তুলনায় আর্দ্রতা কম থাকায় ওই জলীয় বাষ্প বাতাস শুষে নিচ্ছে। কিন্তু সন্ধ্যার পর বাতাসে আর্দ্রতা বাড়তে থাকে। সারা রাত ধরে আর্দ্রতা বেড়ে ভোরের দিকে তা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায়।

১ / ৫
চারদিকে যেন ঘন ‘কুয়াশার’ ছড়াছড়ি, একটু দূরে কিছু দেখা যায় নাছবি: রমেশ কুমার

শাহীনুর ইসলাম বলেন, ভোরের দিকে সূর্যের আলো পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসে থাকা ওই অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প কুয়াশার মতো করে ভাসতে থাকে, যা দেখে নিচু মেঘের মতো মনে হয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা আরও বলছেন, রাতের আকাশ মেঘমুক্ত থাকায় ভূপৃষ্ঠ খুব ঠান্ডা হয়। তাপ বিকিরণ করে ভোর থেকে সকাল ৮টার মধ্যে তাপমাত্রা দ্রুত কমে ২৫-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে চলে আসে। এই তাপমাত্রা কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া তৈরি করে। এ ছাড়া যেখানে তাপমাত্রার ওঠানামা বেশি, সেখানেই কুয়াশা তৈরির সুযোগ বেশি থাকে।