কোনো ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থকে সরাসরি আঘাতের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ চাইলে অপরাধের ধরন ও সমাজে এর অপরিহার্য প্রতিক্রিয়া বিবেচনায় মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন শাস্তির বিধান রাখার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সাইবার নিরাপত্তা আইনে করা এক মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ এসেছে বলে রাষ্ট্রপক্ষ ও আবেদনকারীর আইনজীবী জানিয়েছেন। ওই মামলায় একজন আসামির জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করে বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ রায় দেন।
আইনজীবীদের তথ্য অনুযায়ী, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানায় গত বছরের নভেম্বরে সেলিম খান নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনের চারটি (২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১) ধারায় ওই মামলা হয়েছিল। সেদিনই গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে।
আইনজীবীরা জানান, ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ফেসবুকে নাফিসা চৌধুরী নামের এক নারীর একটি পোস্টকে (মন্তব্য) কেন্দ্র করে। ওই পোস্টে মহানবী (সা.) সম্পর্কে সেলিম খান অবমাননাকর মন্তব্য করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
এ মামলায় গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এর আগে কুষ্টিয়ার আদালতে জামিন চেয়ে গত ১৩ ডিসেম্বর বিফল হন সেলিম খান। পরে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন তিনি। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে রুল নিষ্পত্তি করে নির্দেশনা, পর্যবেক্ষণসহ আজ রায় দেওয়া হয়।
আদালতে সেলিম খানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুল্লাহ আল নোমান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাহাব উদ্দিন আহমেদ।
আসামি সেলিম খানকে ২৫ লাখ টাকার ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে দেওয়া বন্ডে (জামিননামায়) জামিন দেওয়া হয়েছে বলে জানান তাঁর আইনজীবী আবদুল্লাহ আল নোমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জামিনের অপব্যবহার করলে আসামির জামিনের জিম্মাদারকে ওই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। আর ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া নাফিসা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার নথিতে প্রাথমিকভাবে অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার সাক্ষ্য–প্রমাণ থাকায় তাঁকে সহআসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় উল্লেখিত ধারা দুটি জামিনযোগ্য হওয়ায় অপরাধপ্রবণতা (ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত) বাড়ছে। আগের আইনে এটি জামিন অযোগ্য ছিল। তিনি বলেন, রায়ের পর্যবেক্ষণে এসেছে নবী-রাসুল ও তাঁদের চরিত্র নিয়ে এবং অন্য যেকোনো ধর্ম বা ধর্মগ্রন্থকে সরাসরি আঘাতের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে সংসদ চাইলে অপরাধের ধরন ও সমাজে এর অপরিহার্য প্রতিক্রিয়া বিবেচনায় সাইবার নিরাপত্তা আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন শাস্তির বিধান রাখার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।