মৃত্যুর আর ভয় নেই, আরেকবার লড়তে বাধ্য করবেন না: আবদুল হান্নান মাসউদ

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম ওরফে আলিফের জন্য দোয়া ও সম্প্রীতির ডাক দিয়ে আজ বুধবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনছবি: আশরাফুল আলম

বাংলাদেশে হাজার বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সঙ্গে মানুষ বসবাস করে এসেছে। এই দেশে একজনকে হত্যা করে যদি কেউ ভেবে থাকে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান—সবাইকে মুখোমুখি দাঁড় করাবে, তা তাদের দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীতে এক কর্মসূচিতে এ কথা বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ। উসকানিদাতাদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের মৃত্যুর আর কোনো ভয় নেই। আমাদের আরেকবার লড়তে বাধ্য করবেন না।’

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম ওরফে আলিফের জন্য দোয়া ও সম্প্রীতির ডাক দিয়ে বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে সমাপনী বক্তব্য দেন আবদুল হান্নান মাসউদ।

যেখানেই সন্ত্রাসী ছাত্রলীগকে দেখা যাবে, সেখানেই গণপিটুনি গিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হবে—গত পরশু এ সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে হান্নান মাসউদ বলেন, ‘আমরা এত দিন ধৈর্য ধরেছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ ও মুজিববাদী আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করবে। কিন্তু আমরা ধৈর্যহারা হয়েছি। আর ধৈর্য ধরা হবে না।’

ইসকন মানেই সনাতনী নয়—এ কথা উল্লেখ করে সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ইসকনের উগ্রবাদীরা আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যা করেছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের (বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র) প্রতিটি কর্মসূচিকে সনাতনীদের কর্মসূচি বলে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। হাজার হাজার সনাতনী ভাই জঙ্গি ইসকনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। চিন্ময় দাস বা ইসকনকে গণমাধ্যমে সনাতনী হিসেবে প্রচারের কারণেই এটা এত দূর এসেছে।

আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, খেলাফত মজলিস যেমন ধর্মীয় সংগঠন, চিন্ময় কৃষ্ণের সংগঠনও তেমন একটা ধর্মীয় সংগঠন। এই সংগঠন সব হিন্দুর প্রতিনিধিত্ব করে না।

দেশের মাটিতে বসে দিল্লির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে মাসউদ বলেন, ‘শেখ হাসিনা মোদিকে নিয়ে আমার বাংলার মাটির দিকে হাত বাড়াচ্ছে। এই দেশের মানচিত্রের দিকে দিল্লি থেকে কেউ হাত বাড়ালে সেই হাত ভেঙে গুটিয়ে রেখে দেওয়া হবে। সেটা চিন্ময় কৃষ্ণ, ইসকন, আনসার লীগ—যে রূপেই হোক, দেশের মানুষ সেই হাত ভেঙে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।’ বাংলাদেশ সীমান্ত অবরোধের ঘোষণা দেওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীরও কড়া সমালোচনা করেন তিনি।

সংখ্যালঘুদের কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ‘খেলতে চায়’ বলে মন্তব্য করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। তিনি বলেন, গতকাল চট্টগ্রামে ইসকনের পক্ষ থেকে গায়ে পড়ে হামলা করা হয়েছে। যেভাবে মানুষকে উসকে দেওয়া হচ্ছে, এটা দেশের মানুষ পছন্দ করে না। ভারত ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও দেশের মানুষ বলেছে, তারা ঐক্য চায়। এই দেশের মানুষ ধর্মের নামে রাজনীতি চায় না, সবাই মিলে দেশটা গড়তে চায়। ভারত এটা অনুধাবন না করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কলকাঠি নাড়তে চাইলে ভুল করবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে অকার্যকর করার সব ধরনের হুমকিকে নস্যাৎ করতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে উমামা ফাতেমা বলেন, ‘আপনারা আওয়ামী লীগের গণহত্যার বিচার করুন। আওয়ামী লীগের দোসর দিয়ে দেশ নির্মাণ করা সম্ভব নয়। দ্রুততম সময়ে আওয়ামী লীগের দোসরমুক্ত করে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাজাতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রত্যেকের বিচার ও তাদের জেলখানায় ভরলেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা সম্ভব হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ সংহতি রক্ষা করতে হলে আওয়ামী লীগের বিচার করতেই হবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহিন সরকার ইসকনকে ‘জঙ্গি সংগঠন’ আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘ইসকনের নেতৃত্বে যেভাবে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছে, অতিদ্রুত তার বিচার কার্যকর না করা হলে ধরে নেব, ভারতীয় আগ্রাসনের সমর্থকেরা সরকারে বসে আছে। যেসব গণমাধ্যম এখনো ভারতীয় বয়ান প্রচার করছে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য আহনাফ সাঈদ খান, নুসরাত তাবাসসুম, সিনথিয়া জাহিন আয়েশা, ইব্রাহিম নিরব, আসাদ বিন রনি, রফিকুল ইসলাম আইনী প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে শহীদ মিনারে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামের জন্য মোনাজাত করা হয়।