প্রখ্যাত গণিতবিদ মুনিবুর রহমান চৌধুরী আর নেই
প্রখ্যাত গণিতবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মুনিবুর রহমান চৌধুরী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
গতকাল শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মুনিবুর রহমান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ গণিত সমিতির সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে অধ্যাপক মুনিবুর রহমানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে বাসা থেকে বের হতেন না মুনিবুর রহমান। স্ট্রোক হওয়ার পর ৩ জুলাই তাঁকে রাজধানীর বেসরকারি স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৩ জুলাই সেখান থেকে তাঁকে মহাখালীর বেসরকারি মেট্রোপলিটন হাসপাতালে (মেট্রোপলিটন মেডিকেল সেন্টার লিমিটেড) নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
আজ রোববার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সামনে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় জানাজা লালমাটিয়ায় বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাঁকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মুনিবুর রহমান স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন বলে জানান শহীদুল ইসলাম। মুনিবুর রহমানের স্ত্রী ফাতেমা চৌধুরীও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।
মুনিবুর রহমান ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ গণিত সমিতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি ছিলেন মুনিবুর রহমান। ২০২৩ সাল পর্যন্ত গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি এই কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন।
১৯৪১ সালের ১৭ জানুয়ারি ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন মুনিবুর রহমান। ১৯৫৬ সালে বরিশাল জিলা স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন ও ১৯৫৮ সালে রাজধানীর নটর ডেম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে আইএসসি পাস করেন। উভয় পরীক্ষায় তিনি সম্মিলিত মেধাতালিকায় শীর্ষস্থান অধিকার করেন। পরে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। এখানে স্নাতকে দুই বছর পড়ার পর বৃত্তি পেয়ে জার্মানির গ্যোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিষয়ে পড়তে যান তিনি। আগে থেকেই গণিতের সঙ্গে তাঁর সখ্য ছিল। তবে গণিতের সঙ্গে তাঁর বসবাস এখান থেকেই শুরু। ১৯৬৭ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে পিএইচডি অর্জন করেন। পরে তিনি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন পাকিস্তানের ইসলামাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে। ১৯৭১ সালে ইসলামাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুনিবুর রহমান চলে আসেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৮৪ সালে তিনি যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৬ সালে তিনি এই বিভাগ থেকে অবসরে যান।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির আয়োজনে ২০০২ সালে শুরু হয় গণিত উৎসব। প্রথম থেকেই এই উৎসবের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন মুনিবুর রহমান।
‘বীজগণিত (সংখ্যাতত্ত্ব)’, ‘বাস্তব বিশ্লেষণ’সহ বাংলা-ইংরেজিতে গণিতবিষয়ক আটটি বইয়ের রচয়িতা মুনিবুর রহমান। চার দশক ধরে তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনিসিটিবি) বিভিন্ন কার্যক্রমে। এ ছাড়া নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাক্রম কমিটির প্রধান ছিলেন তিনি। শিক্ষার্থীদের গণিতের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে আজীবন কাজ করেছেন মুনিবুর রহমান। গণিতে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি ২০১৫ সালে তাঁকে আজীবন সম্মাননা দেয়।