ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছর রাজধানীর মহাখালী ডিএনসিসি হাসপাতালে ৪ হাজার ৩৪৭ জন ভর্তি হয়েছেন। আর নভেম্বর মাসের ২৫ দিনেই ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৫৬৪ জন, যা মোট ভর্তি রোগীর ৩৬ শতাংশ। হাসপাতালটিতে চলতি বছর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৬ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জনই মারা গেছেন চলতি নভেম্বর মাসে।
ঢাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে এই হাসপাতালেই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। তবে মৃত্যুর দিক থেকে এ হাসপাতালের অবস্থান চতুর্থ। সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
সরকারিভাবে মহাখালীর ডিএনসিসি হাসপাতালকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মানুষদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত (ডেডিকেটেড) করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্র অনুযায়ী এই হাসপাতালে ৩০০ ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন অর্ধেকেরও কম। শিশু, নারী ও পুরুষ ওয়ার্ডে অনেক শয্যাই ফাঁকা দেখা গেছে।
গতকাল সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, মহাখালী ডিএনসিসি হাসপাতালে ১৪৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে দ্বিতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ডে ২৩ জন চিকিৎসাধীন। তৃতীয় তলায় নারী ওয়ার্ডে ৫৫ জন আর চতুর্থ তলার পুরুষ ওয়ার্ডে ৬৯ জন ভর্তি আছেন।
হাসপাতালে এখনো অনেক শয্যা ফাঁকা আছে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তিরা চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে আসতে পারেন।কর্নেল তানভীর আহমেদ, পরিচালক, মহাখালী ডিএনসিসি হাসপাতাল
শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে তিন বছর বয়সী শিশু লামিয়ার। তাদের বাসা পশ্চিম নাখালপাড়া এলাকায়। গত রোববার লামিয়াকে সেখানে ভর্তি করানো হয়। মা তিন্নি আক্তার বলেন, টিনের ছাউনির একটি একতলা বাড়িতে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে তাঁরা থাকেন। বাড়ির আশপাশে অনেক জায়গায় পানি জমে থাকে। সেখানেই এডিস মশা হয়ে থাকতে পারে। তাঁরা যে বাড়িতে ভাড়া থাকেন, সেখানেই আরেকটি কক্ষে ভাড়া থাকা আরেকজনেরও ডেঙ্গু হয়েছিল বলে জানান তিনি।
হাসপাতালটির তৃতীয় তলায় ডি–ব্লকে নারী রোগীদের জন্য নির্ধারিত অংশে গিয়ে দেখা যায়, ভিড় খুব একটা নেই। রোগীর জন্য নির্ধারিত শয্যাগুলো খালি পড়ে আছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বজনেরা ফাঁকা শয্যাগুলোয় থাকছেন। অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের মতো ভিড় কিংবা মেঝেতে ভর্তি রোগীও নেই। পরিবেশও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।
নারী ওয়ার্ডে শুক্রবার ভর্তি করা হয় মহাখালীর আজ্জুতপাড়া এলাকার বাসিন্দা তানজিদা আক্তারকে। তাঁর মা বিউটি বেগম বলেন, ১৭ নভেম্বর রাতে তাঁর মেয়ের প্রথম জ্বর আসে। কয়েক দিন বাসায়ই ছিলেন। জ্বর ভালো হয় না দেখে পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। শুক্রবার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এখন মোটামুটি ভালো।
বিউটি বেগম আরও জানান, তাঁর মেয়ে আক্রান্ত হওয়ার আগে তাঁর দেবরের মেয়েরও ডেঙ্গু ধরা পড়েছিল। সে ভোলা থেকে তাঁদের বাসায় বেড়াতে এসেছিল। সুস্থ হয়ে এখন গ্রামে ফিরে গেছে।
মহাখালী ডিএনসিসি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বেশির ভাগ ডেঙ্গু রোগী তেজগাঁও, নাখালপাড়া, মহাখালী ও কুড়িল-বিশ্বরোড এলাকার। বর্তমানে চিকিৎসাধীন বেশির ভাগ রোগী ওই সব এলাকার বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে থেকে কিছু রোগী চিকিৎসার জন্য ওই হাসপাতালে যান। বিশেষ করে ঢাকার বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাঁদের ভর্তি রাখা সম্ভব হয় না।
কুড়িল বিশ্বরোড এলাকার বাসিন্দা মোস্তাক খান হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিয়ে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, চিকিৎসক-নার্সরা ভালো সেবা দিচ্ছেন। নিয়মিত চিকিৎসক এসে দেখে যান। নার্সদেরও ডাকলেই পাওয়া যায়।
হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, মহাখালী ডিএনসিসি হাসপাতালে মোট ১ হাজার ৫৪টি শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য ৩০০টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হাসপাতালটিতে রোগীদের সেবায় ৭১ জন চিকিৎসক রয়েছেন। নার্স আছেন ৮০ জন। আইসিইউ শয্যা রয়েছে ছয়টি। গুরুতর অসুস্থ হওয়া রোগীদের কিছু পরীক্ষা ছাড়া ডেঙ্গুসম্পর্কিত সব পরীক্ষা হাসপাতালেই করা যায় বলেও জানানো হয়।
হাসপাতালে পরিচালকের নতুন দায়িত্ব নেওয়া কর্নেল তানভীর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়ে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, সেবা পেয়ে তাঁরা খুশি। দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ও নার্সরাও আন্তরিক। হাসপাতালে এখনো অনেক শয্যা ফাঁকা আছে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তিরা চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে আসতে পারেন।’