সাংবাদিকদের আবাসনে পাহাড় না দিয়ে বিকল্প স্থানে দিতে বেলার আইনি নোটিশ
কক্সবাজারের জিলনজা মৌজার ৫ একর পাহাড় শ্রেণিরভূমি সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য বরাদ্দ না দিয়ে বিকল্প উপযুক্ত স্থানে বরাদ্দ দিতে সরকারের আটটি সংস্থা বরাবরে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।
পরিবেশ সচিব, ভূমি সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, কক্সবাজার জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবরে ওই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বেলার আইনজীবী এস হাসানুল বান্না সোমবার এই তথ্য জানান।
বেলা জানায়, পরিবেশগত বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে কক্সবাজার জেলার ১০ দশমিক ৪৬ হেক্টর এলাকাকে সরকার ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে। সেখানে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলার প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার অন্যান্য মৌজার মধ্যে জিলনজা মৌজাও রয়েছে। জিলনজা মৌজার বিএস ১৭০৭০ নম্বরে দাগে ৪৯ দশমিক ৯৭ একর পাহাড় শ্রেণির জমি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের অনূকুলে রেকর্ডে রয়েছে। ২০১০ সালের ৫ মে এক স্মারকের মাধ্যমে দেখা যায় ওই মৌজার (বিএস ১৭০৭০ নম্বর দাগ) ৫ একর পাহাড় শ্রেণির ভূমি সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। পাহাড় কেটে সাংবাদিকদের আবাসন তৈরি হলে তা জাতির কাছে খারাপ দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবে ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের নৈতিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।
বেলা বলছে, সাংবাদিকদের আবাসনের দাবি সর্বাবস্থায় যৌক্তিক তবে তা পাহাড় কেটে নয়। বিকল্প কোনো অকৃষি খাস জমিতে সাংবাদিকদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের কোনো আপত্তি থাকবে না বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ও পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া পাহাড় কাটা/মোচন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এমনকি কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে অবস্থিত সব পাহাড় কাটা বন্ধে এক মামলায় ২০১২ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্ট উল্লেখিত জেলায় অবস্থিত সব পাহাড় কাটা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি আদালত সব পাহাড়ের তালিকা (দাগ ও খতিয়ানসহ) এবং পাহাড়গুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রস্তুত ও তা আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম বিভাগে বিদ্যমান পাহাড়গুলো ক্ষতি, ধ্বংস ও কাটা হতে রক্ষায় প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ; পাহাড় কাটায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা প্রতিটি পাহাড়ে প্রদর্শন করতে বলা হয়। ইতেমধ্যে কাটা হয়েছে—এমন পাহাড়গুলোতে দেশীয় প্রজাতির গাছ লাগাতে ও দেয়াল দিয়ে সুরক্ষিত রাখাতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। আইনি বিধি–নিষেধ ও আদালতের ষ্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকায় কক্সবাজার জেলায় নতুন করে পাহাড় কেটে উন্নয়নের সুযোগ নেই বলে সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য বিকল্প কোনো স্থানে ভূমি বরাদ্দ দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।