অভিভাবকেরা প্রশ্ন তুললেন, ‘মৃত্যু এত সহজ কেন’
হাসপাতালে কাতরাচ্ছে ৯ বছর, ১৪ বছরের গুলিবিদ্ধ শিশুরা। অভিভাবকেরা জানেন না, ওরা আর হাঁটতে পারবে কি না, ওদের ভবিষ্যতে কী আছে। দেশে যুবকদের নিরাপত্তা নেই, এমনকি শিশুদেরও নিরাপত্তা নেই।
আজ শনিবার রাজধানীর শাহবাগে জাদুঘরের সামনে ‘সন্তানের পাশে অভিভাবক’ ব্যানারে এক সমাবেশে এ কথা বলা হয়। সমাবেশে শিক্ষার্থীদের সব ধরনের কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়ে পাশে থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়। অভিভাবকেরা ‘মৃত্যু এত সহজ কেন’ প্ল্যাকার্ড হাতে মানববন্ধন করেন। মিছিলে অংশ নেন।
উত্তরা ৮ নম্বর সেক্টরে থাকে মো. কাওসার খান। ৯ বছরের এই শিশু গত ১৯ জুলাই দুপুরে খাওয়ার পরে আশপাশে হট্টগোল শুনে রাস্তায় যায়। সেখানে তার পেটে গুলি লাগে। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন শিশুটির বাবা। তিনি বলেন, দেশে এমন অবস্থা যে যুবকদের তো নেই–ই, শিশুদেরও নিরাপত্তা নেই। যাঁরা এসবের জন্য দায়ী, তাঁদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অভিভাবক কামার আহমাদ সাইমন বলেন, ‘যে স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনীকে লেলিয়ে দেওয়া হয় বাচ্চাদের ওপর , সেই গণতন্ত্র ও দেশ দিয়ে কী হবে।’ সন্তান শান্তিতে রাস্তায় গিয়ে নিজের অধিকারের কথা বলতে পারবে, এমন দেশ চান বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘এই সন্তানেরাই বিকল্প। এই ভবন, গাড়ি-বাড়ি, মেট্রোরেল, সেতু—জনগণের টাকায় তৈরি হয়েছে। এগুলোর চেয়ে বড় সম্পদ দেশের মানুষ, দেশের শিক্ষার্থীরা।’
অভিভাবকদের সমাবেশে আহত কয়েকটি শিশুর অভিভাবকেরাও যোগ দেন। মোবারক হোসেনের (১৪) বাবা নেই। তারা দুই ভাই। সে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা দিয়েছে। মা দিনমজুর। সমাবেশে যোগ দিয়ে মোবারকের মা বলেন, গত ১৯ জুলাই মিরপুর ১০ নম্বরে একটি কাপড়ের দোকানে বসা ছিল মোবারক। এক বৃদ্ধকে বাঁচাতে গিয়ে তার দুই পায়েই গুলি লাগে। সে আর হাঁটতে পারবে কি না, জানেন না মা। এই মা জানেন না, পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি এই সন্তান নিয়ে তিনি কোথায় যাবেন, কার কাছে যাবেন।
অভিভাবক আশফিয়া আজিম বলেন, শিশুদের ওপর নির্যাতন হয়েছে। এই সন্তানেরা যা চাচ্ছে, তা ন্যায্য। ওরা একা নয়, ওদের সঙ্গে অভিভাবক, বন্ধুরা, শিক্ষক সারা দেশের জনতা আছে।
সমাবেশের আহ্বায়ক রাখাল রাহা বলেন, এই রাষ্ট্র যাঁরা পরিচালনা করছেন, তাঁরা সন্তানদের নিরাপত্তা দিতে সক্ষম নন। সন্তানদের নিরাপত্তার জন্য অভিভাবকেরা রাস্তায় নেমেছেন। ওরা যত দূর যেতে চায়, তত দূর অভিভাবকেরাও যাবেন।
গতকাল শুক্রবার রাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল করছে তারা। আগামীকাল রোববার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।
‘সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ ও ৯ দফা’ দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আজ অভিভাবকেরাও সমাবেশের ডাক দেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া সংঘাতে এ পর্যন্ত ২১৫ জন নিহত হওয়ার তথ্য পেয়েছে প্রথম আলো। তাঁদের মধ্যে শিশু, কিশোর, তরুণও রয়েছেন, আহত হয়েছেন ছয় হাজারের বেশি।