টেলিভিশন: একটাই যন্ত্র, নানাবিধ ব্যবহার
প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে নানান ধরনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে টেলিভিশন। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি পরিবারের ঘরে কমপক্ষে একটি টেলিভিশন রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ওটিটিতে ওয়েব সিরিজ ও ফিল্ম এবং ইউটিউবে বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট দেখা থেকে শুরু করে গেম খেলার কাজেও বাড়ছে টিভির ব্যবহার। এ ছাড়া অফিস মিটিংয়ের সময় প্রেজেন্টেশন দেওয়া কিংবা জুম মিটিংয়েও ব্যবহার করা হচ্ছে টেলিভিশন।
স্যামসাং বাংলাদেশের কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস ডিভিশনের উপমহাব্যবস্থাপক ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘টেলিভিশন এখন আর কেবল্ সংযোগের মাধ্যমে নির্দিষ্ট চ্যানেল দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ব্যবহৃত হচ্ছে নানা কাজে। আমাদের সব টিভিই ‘‘স্মার্ট সুবিধা’’সমৃদ্ধ। আর স্মার্ট ক্রেতারা এখন সর্বশেষ প্রযুক্তির টিভিই বেশি পছন্দ করছেন।’
চলুন, জেনে নেওয়া যাক টেলিভিশনের নানামুখী ব্যবহার সম্পর্কে—
শিক্ষা ক্ষেত্রে টেলিভিশন
শুধু পড়াশোনার জন্য অনেকেই টেলিভিশন ব্যবহার করে থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার। কোভিড মহামারির কারণে মাসের পর মাস বন্ধ ছিল বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। তখন স্কুলের বাইরে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সংসদ টিভিতে প্রতিদিন পাঠ প্রচারের পাশাপাশি ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন ই-লার্নিং উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সেই ধারা এখনো বজায় রয়েছে। তাই অনেক স্কুল-কলেজে ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কোচিং সেন্টার শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়গুলো শেখানোর জন্য টেলিভিশন ব্যবহার করছে। এ ছাড়া বর্তমানে ইংরেজি ভাষায় বেশি বেশি প্রোগ্রাম বানিয়ে, তা টেলিভিশনে প্রচার করে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শিক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করা হচ্ছে। এতেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় বাড়ছে টেলিভিশনের ব্যবহার।
টেলিভিশন এখন ওটিটিময়!
ওটিটি (ওভার দ্য টপ) এখন বিনোদন দুনিয়ার বহুল পরিচিত একটি শব্দ। তাই বিশ্বজুড়েই বাড়ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা। আর বিনোদন-তারকাও এখন ওটিটির জন্য তাঁদের সেরা কাজটি করতে উন্মুখ হয়ে থাকেন। সাবস্ক্রিপশনের ভিত্তিতে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে চলচ্চিত্র ও ওয়েব সিরিজ থেকে শুরু করে নানা ধরনের ভিডিও কনটেন্ট দেখানো হয়। এসব কনটেন্ট টেলিভিশনেও দেখার সুযোগ রয়েছে। ওয়েব সিরিজ ও সিনেমা দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করে রাখছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো। অ্যামাজন, ডিজনি হটস্টার, নেটফ্লিক্স ও হইচই থেকে শুরু করে দেশীয় চরকিসহ নানান ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত সিনেমা, ওয়েব সিরিজ ইত্যাদি দেখার সুযোগ রয়েছে। যাঁদের টেলিভিশন অ্যান্ড্রয়েড, তাঁরা ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর অ্যাপস ডাউনলোড করে দেখতে পারেন।
সরকারি চাকরিজীবী ফারজানা আক্তার জানান, ‘পাঁচ বছর ধরে বাসার টিভিতে কেবল্ সংযোগ ছাড়াই চালাচ্ছি। বিজ্ঞাপনবিহীন ওয়েব সিরিজ ও ওয়েব ফিল্ম দেখার জন্য ওটিটিই আমার সেরা পছন্দ। প্রয়োজনমতো বিভিন্ন মেয়াদের প্ল্যান কিনে নিই আমি। কিছু স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নিয়মিত নানান অফার দিয়ে থাকে মেম্বারশিপের জন্য, যা খরচ কমাতেও সাহায্য করে।’
টেলিভিশনে ইউটিউব
আপনি যা দেখতে চান, সবই আছে ইউটিউবে—কথাটি বললে অত্ত্যুক্তি হবে না। ভিডিও শেয়ার করার একটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ইউটিউব। ২০০৫ সাল থেকে যাত্রা শুরু করা ইউটিউব ভিডিও ক্লিপ, সিনেমা, গান, ডকুমেন্টারিসহ বিভিন্ন ধরনের ভিডিওর বিশাল আর্কাইভে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে সব স্মার্ট টিভিতেই ইন-বিল্ড ইউটিউব থাকে। বাসায় ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে আপনি টেলিভিশন চালু করেই ডুবে যেতে পারবেন ইউটিউবের দুনিয়ায়।
মিটিংয়ে বাড়ছে টিভির ব্যবহার
বর্তমানে বেশির ভাগ করপোরেটে ভার্চ্যুয়াল মিটিং এবং প্রেজেন্টেশনে ব্যবহৃত হচ্ছে টিভি। এ ছাড়া বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাড়ছে বড় স্ক্রিনের টিভির ব্যবহার। বড় পর্দার টিভি বাড়িতে সৃষ্টি করে হোম থিয়েটারের আবহ। শুধু সিনেমাই নয়, সাধারণ টিভি সিরিয়ালগুলোও বড় পর্দায় বেশ উপভোগ্য।