একসঙ্গে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মা–ছেলে, হাসপাতালেও এক শয্যায়
একই শয্যায় কাতরাচ্ছেন মা ও ছেলে। দুধের শিশুটির যন্ত্রণায় নিজের অসুখের কষ্ট অনুভব করার ফুরসত নেই মায়ের। সন্তানের সব কষ্ট যদি নিজের করে নিতে পারতেন, এমন চেষ্টা তাঁর। অস্ফুটস্বরে বলছেন, “আমার ছেলেটা খুব কষ্ট পাচ্ছে।”
চট্টগ্রামের মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে একই শয্যায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মা বিবি আমেনা ও তাঁর দুই বছর দুই মাসের ছেলে ফারহান হোসেন এভাবেই ডেঙ্গুর সঙ্গে যুদ্ধ করছে। গত মঙ্গলবার তাঁদের দুজনকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই হাসপাতালে গতকাল বুধবার মোট ১৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলেন।
হাসপাতালের পরিচালক মো. নুরুল হক বলেন, এ মাসে সর্বোচ্চ ২২ জন ডেঙ্গু রোগী এখানে এক দিনে চিকিৎসা নিয়েছেন। অন্যান্য মাসের চেয়ে এ মাসে কিছুটা বেড়েছে। শিশুদের পাশাপাশি বয়স্করাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বিবি আমেনাদের বাসা নগরের মাদারবাড়ি এলাকায়। ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে দুজনকে ভর্তি করা হয় এই হাসপাতালে। স্ত্রী ও সন্তানের শুশ্রূষায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ইমন হোসেন। তিনি একটি পরিবহন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
ইমন হোসেন জানান, ‘প্রথমে স্ত্রীর জ্বর ওঠে। তিন দিন পরও জ্বর না কমলে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এরপর ৮ সেপ্টেম্বর একমাত্র সন্তান ফারহানেরও জ্বর আসে। তারও ডেঙ্গু ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসক পরামর্শ দেন হাসপাতালে ভর্তি করতে। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে নিয়ে আসি। এখানে স্যালাইন দেওয়া হয় দুজনকে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, বিবি আমেনার ডান হাতে ক্যানুলা লাগানো। বাঁহাতে ক্যানুলা রয়েছে ছেলে ফারহানের। ফারহানকে কোলে নিয়ে বসে আছেন মা। কান্না করছে সে। আমেনা বলেন, ‘ছেলেটা কষ্ট সহ্য করতে পারছে না। আমার নিজেরই কত কষ্ট হচ্ছে। এতটুকু বাচ্চা কীভাবে ডেঙ্গুর যন্ত্রণা সহ্য করবে।’
আজ বৃহস্পতিবার কিছুটা উন্নতির দিকে মা আমেনা। কিন্তু আজ ফারহানের রক্তে প্লাটিলেট নেমে এক লাখে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসকেরা আরও পর্যবেক্ষণে রাখবেন তাকে। সে জন্য মা ও ছেলে আপাতত হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন না।
ইমন হোসেন বলেন, ‘স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা এখন ভালো। তবে ছেলেটা সারাক্ষণ কান্নাকাটি করছে। সহ্য হয় না। কবে যে এ থেকে মুক্তি মিলবে, বুঝতে পারছি না। বাসায় নিয়ে যেতে পারলেই শান্তি।’
চট্টগ্রামে শেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ দুপুরে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। মারা যাওয়া কিশোরের নামে ওয়াহিদুর রহমান ওরফে নয়ন (১৬)। গতকাল সকাল সোয়া আটটায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় সে। এর আগের দিন মঙ্গলবার রাতে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। তাদের বাড়ি বান্দরবানে।