প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার বিষয়টি খুবই অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক; উদ্বেগজনকও বটে। সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এমনিতেই সংকুচিত। এ ধরনের মামলায় সেটি আরও সংকুচিত হবে। সাংবাদিকেরা সত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে যে স্ব-আরোপিত বিধিনিষেধ মেনে চলেন, সেটা আরও বাড়বে। সংবাদপত্রে কোনো ভুল হলে প্রতিকারের জন্য সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির প্রেস কাউন্সিলে যাওয়ার বিধান আছে। সেখানেই বিষয়টির নিষ্পত্তি হতে পারত। কিন্তু সাভারের ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একাধিক মামলা করার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করেছে বলে অনেকে মনে করেন। যে খবর নিয়ে প্রথম আলোর সম্পাদক ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেই খবরে কোনো ভুল ছিল না। ফেসবুকে দিনমজুরের বক্তব্যের সঙ্গে একটি শিশুর ছবির যে অসংগতি ছিল, ফেসবুকের সেই পোস্ট দ্রুত প্রত্যাহার করা হয়। পরে অনলাইনে প্রতিবেদনের সঙ্গে সংশোধনী যুক্ত করে বিষয়টি জানানো হয়।
তদুপরি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া মধ্যরাতে কোনো সাংবাদিককে বাসা থেকে তুলে আনা, একই ঘটনায় একাধিক থানায় মামলা হওয়া অভিনব ঘটনা। আমরা বরাবরই বলে আসছি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গ্রহণযোগ্য নয়। আইনটি স্বাধীন মতপ্রকাশের বিরুদ্ধে অহরহ ব্যবহৃত হচ্ছে।
পাকিস্তান আমলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে সবচেয়ে জোরালো ভূমিকা রেখেছে সাংবাদিক সমাজ। সাংবাদিকদের মধ্যে রাজনৈতিক মত ও পথের ভিন্নতা থাকলেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিষয়ে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। স্বাধীনতার পরও সেটি অনেক বছর চলেছে। এরশাদ আমলে সরকারের সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে সাংবাদিকেরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছেন। সংবাদপত্র বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হলে সমাজের অন্য শ্রেণি ও পেশার মানুষও প্রতিবাদ করবেন, করছেনও। কিন্তু জোরালো প্রতিবাদটি আসতে হবে সাংবাদিকদের ভেতর থেকেই।
বর্তমানে সাংবাদিকদের মধ্যে নানা বিভক্তি এসেছে। ফলে তাঁরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে পারছেন না। আবার বাণিজ্যিকীকরণের কারণে অনেক গণমাধ্যম জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের চেয়ে করপোরেট স্বার্থকে বড় করে দেখছে।
নানা কারণেই বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এমন একটা পরিস্থিতিতে সম্পাদক ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা, গ্রেপ্তারের ঘটনা গণমাধ্যমকে আরও ঝুঁকিতে ফেলে দেবে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, প্রফেসর ইমেরিটাস