বইমেলায় বাড়তি দিন শুরু
অমর একুশে বইমেলার বাড়তি মেয়াদ আজ শুক্রবার শুরু হচ্ছে। প্রকাশকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাড়তি দুই দিনের অনুমোদন দেওয়ায় ফেব্রুয়ারির মেলা এবার মার্চে গড়িয়েছে। ছুটির দিনের নিয়মে আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
প্রকাশকেরা বলেছেন, স্বাভাবিকভাবে মেলার শেষ দুই দিনে যেমন বিক্রি হয়, মেয়াদ বৃদ্ধির ঘোষণা আগাম আসায় তা হয়নি। গতকালও আগের দিনের মতোই মেলার পরিবেশ ছিল বেশ নিরিবিলি। নবযুগ প্রকাশনীর প্রকাশক অশোক রায় নন্দী বলেন, বৃহস্পতিবার (গতকাল) যদি মেয়াদ বৃদ্ধির ঘোষণা আসত, তাহলে মেয়াদ বৃদ্ধির সুবিধা পুরোপুরি পাওয়া যেত।
তিনি বলেন, এবার মেলায় লোক পরিমাণে বেড়েছে, বিক্রি সে হারে বাড়েনি। তাঁর মতে, জনসংখ্যার অনুপাতে পাঠকের সংখ্যা কমেছে। বড় প্রকাশক ছাড়া মাঝারি ও ছোট প্রকাশকেরা তাঁদের প্রত্যাশামাফিক বিক্রি পাননি। জনপ্রিয় ধারার একধরনের বইগুলোর প্রতিই ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি দেখা গেছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বই পাঠকের সেভাবে নজরে আসেনি।
একই রকম মন্তব্য করলেন প্রতীক প্রকাশনীর প্রকাশক নূর-ই-মোনতাকিম আলমগীর। ফেসবুক ও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের সেলিব্রিটিদের বইয়ের প্রতি একধরনের পাঠকের আগ্রহ বেশি ছিল। তবে সার্বিকভাবে মেলার বিক্রি ভালো বলেই তিনি জানালেন।
জার্নিম্যানের স্টলে কথা হলো লেখক ফারুক মঈনউদ্দীনের সঙ্গে। বইমেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এত লোক এখন মেলায় আসছে, কিন্তু বই তেমন বিক্রি হচ্ছে না। যাঁরা প্রকৃতই বই কিনতে চান, ভিড়ের জন্য তাঁরা স্বস্তিতে বই যাচাই-বাছাই করতে পারেন না। এখন মেলায় প্রবেশের জন্য টিকিটের প্রচলন করা যেতে পারে।
তা ছাড়া মেলার ব্যবস্থাপনা এখন প্রকাশকদের হাতে দেওয়ার সময় এসেছে। মেলা করা বাংলা একাডেমির দায়িত্ব নয়। তারা সহযোগিতা দিতে পারে। মূল দায়িত্ব প্রকাশকদের হাতে থাকলে মেলার ব্যবস্থাপনা ও প্রকাশনায় অনেক পেশাদারি আসবে।
নতুন বই ৩ হাজার পেরিয়েছে
মেলার স্বাভাবিক সময় গতকাল ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নতুন বইয়ের তালিকা করেছে বাংলা একাডেমি। তাদের হিসাবে এবার মেলায় নতুন এসেছে ৩ হাজার ২৫৬টি বই। সবচেয়ে বেশি কবিতার বইয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৬২টি। ঔপন্যাসিকেরা দ্বিতীয় স্থানে ৪৭৩টি আর গল্পকারেরা তৃতীয় হয়েছেন ৪৫৩টি গ্রন্থ রচনা করে। প্রাবন্ধিকেরা লিখেছেন ১৮১টি বই। এ ছাড়া জীবনী ১২০টি, ছড়া ৯৮টি, গবেষণাগ্রন্থ ৭৩টি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ৬৫টি, বিজ্ঞানবিষয়ক বই প্রকাশিত হয়েছে ৬০টি। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু, ইতিহাস, রাজনীতি, নাটক, ভ্রমণ, চিকিৎসা,অভিধানসহ বিভিন্ন বিষয়ের বই প্রকাশিত হয়েছে। মেলা আরও দুই দিন চলবে, তাই আরও দেড় থেকে দুই শ নতুন বই আসতে পারে বলে আয়োজকদের অনুমান।
নতুন বই
গতকাল একাডেমির তথ্যকেন্দ্রের হিসাবে নতুন বই এসেছে ১২৭টি। প্রথমায় নতুন বইয়ের মধ্যে এসেছে লুনা রুশদীর উপন্যাস আর জনমে। এ ছাড়া মঈনুস সুলতানের ভ্রমণ বলকানের তুর্কি হামাম, বদরুল আলম খানের ইরান: খোমেনির ইসলামিক বিপ্লব ও তারপর বইগুলো ভালো চলেছে।
এবারের উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে বাংলা একাডেমি এনেছে বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিকদের ছোটগল্পের ইংরেজি অনুবাদ অব হোপস অ্যান্ড ড্রিমস: স্টোরিস ফরম বাংলাদেশ। এটি অনুবাদ করেছেন পারভিন কে ইলিয়াস। সময় এনেছে শান্তনু মজুমদারের জীবন জয়ী হবে: সরদার ফজলুল করিমের সাথে কথোপকথন, এনআরবি স্কলার্স পাবলিশার লিমিটেড এনেছে হাসান ফেরদৌসের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে উপন্যাসধর্মী রচনা কাপুরুষ ও সালভাদর দালির মিস বাংলাদেশ। সৌম্য এনেছে যতীন সরকারের প্রবন্ধ আমাদের চিন্তা চর্চার দিগ-দিগন্ত, অন্য প্রকাশ এনেছে কামাল চৌধুরীর কবিতা প্রতিপৃষ্ঠা নদীর জীবন, নয়েস এনেছে ঝর্ণা রহমানের গল্প নির্বাচিত প্রেমের গল্প: তুমুল বৃষ্টির কোরাস।
জাভা দ্বীপে র্যাঁবো: হারানো সমুদ্রাভিযান
ফরাসি কবিতার বিস্ময়বালক বলে খ্যাত ভবঘুরে কবি আর্তুর র্যাঁবো যৌবনের প্রারম্ভে ওলন্দাজ ঔপনিবেশিক সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে চলে গিয়েছিলেন ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে। সেখানে পৌঁছেই তিনি পালিয়ে যান। ১৮৭৬ সালে জাভা থেকে উধাও হয়ে পরের বছর নববর্ষে মায়ের কাছে ফিরে এসেছিলেন তিনি। লেখক জেমি জেমস একটা গোয়েন্দা কাহিনির মতোই র্যাঁবোর জীবনের সেই দিনগুলোর ভ্রমণপঞ্জি ও যাত্রাপথ তুলে ধরেছেন। জাভা দ্বীপে র্যাঁবো: হারানো সমুদ্রাভিযান নামের বইটি অনুবাদ করেছেন ফারুক মঈনউদ্দীন, মেলায় এনেছে জার্নিম্যান বুকস।
ফারুক মঈনউদ্দীন গল্পকার, ভ্রমণ লেখক, অনুবাদক, অর্থনীতি ও ব্যাংক বিশ্লেষক। লেখালেখির জগতে প্রবেশ গত শতকের সত্তরের দশকের শেষ ভাগে। প্রকাশিত গ্রন্থ ২৪, ভ্রমণসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, অনুবাদে আইএফআইসি ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন।
ঘরে বসে বইমেলার যেকোনো বই পেতে: ০১৭৩০০০০৬১৯