আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কি না এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা প্রস্তুত, তা জানতে চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক্–নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল।
গতকাল রোববার নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকারকর্মীদের সঙ্গে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাসে পৃথক বৈঠকে বাংলাদেশ সফররত ইইউর ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলটি এ বিষয়গুলো জানতে চেয়েছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া নাগরিক সমাজের একাধিক প্রতিনিধি এই প্রতিবেদককে এসব কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, সেটাও ইইউ প্রতিনিধিদলটি জানতে চেয়েছে।
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সবার জন্য সমান সুযোগ আছে কি না এবং নির্বাচনসংক্রান্ত আইন বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে কি না, সেটাও ইইউ প্রতিনিধিদল জানতে চেয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে নাগরিক সমাজের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত, ইইউ প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশে আসার পর থেকে শুধু ১১ জুলাই নির্বাচন কমিশনে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছে। এর বাইরে প্রতিনিধিদলটি তাদের বৈঠক নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেনি।
ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ব্রতীর
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী আদিলুর রহমান খান এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবির অংশ নেন।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনের প্রক্রিয়া এবং এই প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা, নির্বাচন কতটা অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার মতো পরিস্থিতি আছে কি না, তারা জানতে চেয়েছিল। এ ব্যাপারে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলে তিনি ইইউ প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছেন।
পৃথক বৈঠকে অংশ নেওয়া নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের অধিকাংশই নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে যুক্ত আছেন। এই প্রেক্ষাপটে আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের যেসব সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে যুক্ত, তাদের কাজের পরিধি ও সুযোগ কেমন, সেটা ইইউ প্রতিনিধিদল জানতে চেয়েছে। কেন এবং কোন পরিস্থিতিতে ২০১৮ সালে শেষ মুহূর্তে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষণ মিশন না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেটিও আলোচনায় উঠে আসে।
আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ এই প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমানে নির্বাচনের প্রক্রিয়া যেটা আছে, তা নিয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ কী এবং কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে জনগণের মধ্যে কতটা আস্থা আছে, সে প্রশ্নও তারা তুলেছে।
আগামী নির্বাচন কতটা অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কতটা অংশগ্রহণ থাকবে, সে প্রশ্নটিও তুলেছে ইইউ প্রতিনিধিদল। তখন একাধিক আলোচক উল্লেখ করেছেন, নির্বাচন শুধু ভোটারের ব্যাপক অংশগ্রহণমূলক হলেই চলবে না, এতে প্রধান সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণও জরুরি।
নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। এ প্রসঙ্গে জানিপপের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বর্তমান সরকার তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছে। সেখানে নির্বাচনের আগে কোন ধরনের সরকারব্যবস্থা কতটা সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সময়ের ব্যাপ্তি যতই কম হোক না কেন, নির্বাচনের আগে বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা ভোটার এবং দলগুলোকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে আস্থা জোগাবে।’
সরকারের আমন্ত্রণে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ইইউর প্রাক্-নির্বাচন অনুসন্ধানী দলটি ৮ জুলাই ঢাকায় আসে। ১৬ দিনের সফরে প্রতিনিধিদলটি সরকার, রাজনৈতিক দল, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবে। তারা ব্রাসেলসে ইইউ সদর দপ্তরে যে মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দেবে, তার ওপর ভিত্তি করে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে নাগরিক সমাজের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত, ইইউ প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশে আসার পর থেকে শুধু ১১ জুলাই নির্বাচন কমিশনে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এর বাইরে প্রতিনিধিদলটি তাদের বৈঠক নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেনি।