প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং প্রতিবন্ধিত্ব–সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর সংবেদনশীল ও ন্যায্য উপস্থাপনার ওপর জোর দিয়েছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ বিশিষ্টজনেরা। এ ছাড়া তাঁরা গণমাধ্যম সংবাদ ও তথ্যে দর্শক-শ্রোতাদের প্রবেশগম্যতা এবং বার্তাকক্ষ ও ব্যবস্থাপনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অংশগ্রহণ নিশ্চিতেরও আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ বুধবার রাজধানীতে ‘গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী সমতা বিষয়ে ব্যবহারিক নির্দেশিকার খসড়া উপস্থাপনা’ শীর্ষক এক পরামর্শ সভায় এ আহ্বান জানানো হয়।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা–ইউনেসকোর সহায়তায় গণমাধ্যম ও যোগাযোগবিষয়ক উন্নয়ন সংগঠন সমষ্টি এ সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সমষ্টির নির্বাহী পরিচালক মীর মাসরুরুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য দেন ইউনেসকো ঢাকা অফিসের কমিউনিকেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সেক্টর লিড নূরে জান্নাত। তিনি ব্যবহারিক নির্দেশিকার প্রেক্ষাপট, বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণমাধ্যমের গুরুত্ব, নির্দেশিকার অভিযোজনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
সভায় গণমাধ্যমের আধেয় বিশ্লেষণ, দলীয় আলোচনা ও সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে পরিচালিত গবেষণা ফলাফলের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন সমষ্টির গবেষণা ও যোগাযোগ পরিচালক রেজাউল হক। গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক খবরের পরিমাণ খুব কম। সংবাদসহ প্রতিবন্ধিতা–সম্পর্কিত বিষয়গুলো সাধারণত নির্দিষ্ট দিবসকেন্দ্রিক এবং বিষয়বস্তুতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহানুভূতির চোখে দেখা হয়, পাশাপাশি বিষয়বস্তুতে গভীরতা ও বৈচিত্র্যের অভাব থাকে।
ইউনেসকোর তৈরি ‘গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী সমতাবিষয়ক ব্যবহারিক নির্দেশিকার’ প্রধান বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শাহনাজ মুন্নী। তিনি সম্পাদকীয় বিষয়বস্তু ও সমতাভিত্তিক অনুষ্ঠান, গণমাধ্যম বিষয়বস্তু ও অনুষ্ঠান প্রবেশগম্য করা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থাপনার চর্চাসহ নির্দেশিকার বিভিন্ন আধেয় নিয়ে আলোচনা করেন।
পরামর্শ সভায় বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে ছিলেন এটুআই-এর অ্যাকসেসিবিলিটি বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক ভাস্কর ভট্টাচার্য, ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমদ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের হেড অব ডিজিটাল জাহিদ নেওয়াজ খান, বাংলাভিশনের সিনিয়র নিউজ এডিটর সালমা ইয়াসমিন, চ্যানেল আইয়ের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার জামাল রেজা ও আইএলওর কর্মসূচি কর্মকর্তা ফারজানা রেজা। তাঁদের আলোচনায় গণমাধ্যমের বিষয়বস্তুকে প্রবেশগম্য করা, অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্পাদকীয় চর্চা, বর্তমান চর্চার চ্যালেঞ্জসমূহ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থাপনা, বৈশ্বিক ও জাতীয় প্রেক্ষাপট ইত্যাদি বিষয় উঠে আসে।
ইউনেসকোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি সুজান ভাইজ তাঁর পাঠানো লিখিত সমাপনী বক্তব্যে মার্কিন সাংবাদিক ও লেখক সারা লুটারম্যানকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘সংবাদকক্ষে আরো বেশি প্রতিবন্ধী সাংবাদিক থাকা প্রয়োজন, যাঁরা প্রতিবন্ধকতার জটিল গল্পগুলো তুলে ধরবেন। যদি আপনার প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী কর্মী থাকেন, তাঁদের জিজ্ঞেস করুন যে তাঁদের পেশাগত উন্নয়নের জন্য কী কী প্রয়োজন এবং কীভাবে তরুণ প্রতিবন্ধী সাংবাদিকদের উন্নয়নের পথ তৈরি করা যায়।’ সংবাদকক্ষগুলোর বৈচিত্র্য থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা শুধু জাতি বা লৈঙ্গিক ক্ষেত্রে নয়, বরং প্রতিবন্ধী পরিচয়কেও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
সভায় আলোচনা করেন সাংবাদিক, প্রযোজক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, জাাতিসংঘের এবং প্রতিবন্ধী–বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।