রাস্তায় ছিনতাই করে ১৫% কর দিলে কোনো কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করতে পারবে না, এটা কি হয়?
‘দেশের প্রচলিত আইনে যা-ই থাকুক না কেন, কোনো করদাতা স্থাবর সম্পত্তি, যেমন ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ও ভূমির জন্য নির্দিষ্ট করহার ও নগদসহ অন্যান্য পরিসম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করলে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকারের প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না।’
এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের বাক্যটি কি ঠিক হলো?
এর দুটো দিক আছে। একটা দিক নিয়ে সবাই প্রশ্ন তুলছেন। প্রদর্শিত আয়ে ২৫ ভাগ আয়কর দিতে হয়, ৩০ ভাগও দিতে হয়। আর অপ্রদর্শিত আয়ে দিতে হবে মাত্র ১৫ ভাগ। তাহলে লোকে কেন আয়কর দেবে? নগদ অর্থ থেকে ১৫ ভাগ কর দিয়েই আয় বৈধ করে নেওয়া যাবে। আর জমিজমা, ফ্ল্যাট কিনলে তো কথাই নাই। টাকা চুপসানো বেলুনের মতো কমে যায়।
২ কোটি টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনে ৬০ লাখ টাকা দাম দেখানোটাই দস্তুর। এলাকাভেদে প্রতি বর্গফুটে কত দাম দিতে হবে, তা লেখা আছে। তার মানে ২ কোটি টাকা বৈধ আয় করে আপনি ৬০ লাখ টাকা কর দেবেন, আর তা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনলে আপনি ৯ লাখ টাকা কর দিয়েই বৈধতা দাবি করতে পারবেন। এটা নিয়ে কথা হচ্ছে হোক।
কিন্তু আমার প্রশ্ন আরেকটা বিষয় নিয়ে। প্রচলিত আইনে যা-ই থাকুক, কোনো কর্তৃপক্ষই প্রশ্ন তুলতে পারবে না, যদি আমি ১৫% কর দিয়ে দিই। এখন ধরা যাক, একজন ব্যাংকের ক্যাশিয়ার। তিনি ব্যাংকের টাকা ১০ লাখ নিয়ে গেলেন বাড়িতে। তারপর দেড় লাখ টাকা কর দিলেন। এখন তাঁর কর্তৃপক্ষ কি তাঁকে কোনো প্রশ্নই করতে পারবে না? এটা হয়?
কেউ যদি ডাকাতি করে, চুরি করে, সোনা চোরাচালান করে, মাদকের ব্যবসা করে, জুয়া-ক্যাসিনো থেকে টাকা আয় করে, নারী ও শিশু পাচার করে এবং আয় করে, তারপর ১৫% কর দেয়, তাহলে আর কোনো কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না?
নিশ্চয়ই বাজেটের মাধ্যমে এই রকম অবৈধ আয়কে বৈধ করার ছাড় দেওয়া হয়নি। এটা হবে অপ্রদর্শিত বৈধ আয়ের ওপর। একজন চিকিৎসক অনেক কষ্ট করে রোগী দেখে আয় করেছেন, এটা তাঁর বৈধ আয়, কিন্তু তিনি তা প্রদর্শন করেননি, এখন তাঁর আয়ের ওপরে তিনি ১৫% কর দিয়ে বৈধতা অর্জন করতে পারবেন। বা ধরা যাক, একজন গায়ক বা ক্রিকেটার গান গেয়ে বা ক্রিকেট খেলে আয় করেছেন, প্রদর্শন করেননি, তিনি ১৫% কর দিয়ে এই আয়কে সাদা করে নিতে পারবেন।
তাই বলে আমি রাস্তায় ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে আপনার টাকা কেড়ে নিয়ে এসে ১৫% কর দিয়ে সেই আয়কে বৈধ করে নেব, এটা কোনো দিনও হতে পারে না।
কাজেই আমার মনে হয়, বাজেটে প্রস্তাবিত এই লাইনগুলোকে সংশোধন করতে হবে। এর আগে এ রকম ছিল। কোনো অর্থ-কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করতে পারবে না, কিন্তু ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইন কার্যকর থাকবে, এটা স্পষ্ট বোঝাতে হবে।