স্ত্রী–সন্তানকে নিয়ে ১৫ দিন সাগরপারে খোলা আকাশের নিচে ছিলাম: লেবাননফেরত হোসাইন

স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে দেশে ফিরেছেন নরসিংদীর মোহাম্মদ হোসাইনছবি: প্রথম আলো

‘আমি যেখানে থাকতাম, সেই ভবনের পাশের চার-পাঁচটি ভবন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। বোমার বিকট শব্দে থাকা যায় না। হৃৎপিণ্ড সব সময় লাফাতে থাকে। ইসরায়েলি বিমান সব সময় আকাশে উড়তে থাকে। কখন বোমা ফেলে, এ নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। লেবাননের এমন কোনো জায়গা নেই, যেটা নিরাপদ।’

লেবাননফেরত মোহাম্মদ হোসাইন ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রথম আলোর কাছে লেবাননের সাম্প্রতিক এমন অভিজ্ঞতার কথা জানান।

যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে লেবানন থেকে হোসাইনের পরিবারটিসহ ৫৪ জন বাংলাদেশি আজ সোমবার দেশে ফেরেন। তাঁদের বহনকারী ফ্লাইটটি সোমবার সন্ধ্যা ৫টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে তাঁদের অভ্যর্থনা জানান প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

সাত বছর আগে লেবাননে পাড়ি জমিয়েছিলেন নরসিংদীর মোহাম্মদ হোসাইন। স্ত্রীকে নিয়ে যান তিন বছর আগে। সেখানেই তাঁদের সন্তান মাহাদির জন্ম। তার বয়স এখন ১১ মাস।

হোসাইন আরও বলেন, ‘আমি ১৫ দিন ধরে স্ত্রী–সন্তান নিয়ে সাগরপারে খোলা আকাশের নিচে ছিলাম। সেখানে এখন খুব ঠান্ডা পড়ছে৷ খুব বাতাস, খুব খারাপ অবস্থা। থাকার মতো পরিবেশ নেই।’

যাঁরা এখনো লেবাননে আছেন, তাঁদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা দেশে ফিরতে চায়, যত দ্রুত সম্ভব তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হোক। সরকারের কাছে দাবি, সরকার যেন আমাদের পুনর্বাসন করে।’

৫ বছরের ছেলেকে নিয়ে দেশে ফিরেছেন লিপি আক্তার। তবে সেখানে রয়ে গেছে তাঁর পরিবারের আরও কিছু সদস্য
ছবি: প্রথম আলো

লেবাননে গৃহকর্মীর কাজ করতেন রূপগঞ্জের বাসিন্দা লিপি আক্তার। আজ তিনি পাঁচ বছর বয়সী ছেলে ইয়াছিনকে নিয়ে দেশে ফিরলেন। তবে সেখানে তাঁর পরিবারের আরও পাঁচ সদস্য আছেন বলে জানালেন৷

লিপি আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের যখন বিমানে ওঠানো হলো, তখনো বোমা ফেলার শব্দ পেয়েছি। বিমান কেঁপে উঠেছে। বিমান ওড়ার আগেও আরেকটি বোমা ফেলা হয়েছে।’

মা–ছেলে ফিরলেও সেখানে তাঁর স্বামী ও ননাসের পরিবার রয়ে গেছে। তাঁরা না ফেরা পর্যন্ত দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে লিপির।

এদিকে একেবারে খালি হাতে দেশে ফিরে মন খারাপের কথা জানালেন মুন্সিগঞ্জের ছেলে মোহাম্মদ রাজন। তিনি বলেন, ‘১০ বছর সেখানে ছিলাম। একেবারে খালি হাতে এসেছি। কখনো চিন্তা করিনি খালি হাতে আসব। সরকারের কাছে চাওয়া, আমাদের এখানে কাজের ব্যবস্থা করে দিক, নয়তো অন্য কোনো দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হোক।’

বিমানবন্দরে লেবাননফেরত বাংলাদেশিদের অভ্যর্থনা জানাতে চাওয়া উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, লেবানন থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফেরাতে সব রকমের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে প্রবাসীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে যত টাকা প্রয়োজন, এ সরকার তা খরচ করবে। যতজন ফিরতে চায়, তাদের সবাইকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।

লেবানন থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের স্বাগত জানান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
ছবি: প্রথম আলো

প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, লেবাননে এক লাখের মতো বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন। তার মধ্যে ১ হাজার ৮০০ জন দেশে ফিরে আসার ইচ্ছা পোষণ করেছে। এই সংখ্যা বাড়তেও পারে, আবার কমতেও পারে।

লেবাননের পরিস্থিতি জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ওনারা (ফেরত আসা ব্যক্তিরা) বললেন ওখানে ইসরায়েলের বাহিনী এমন ভয়াবহ হামলা করছে যে তাঁরা দক্ষিণ লেবানন থেকে উত্তর লেবাননে গিয়েও হামলার শিকার হয়েছেন। লেবাননে এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে তাঁরা নিজেদের নিরাপদ রাখতে পারেন। তাঁরা সমুদ্রের পারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। তাঁদেরকে ফিরিয়ে আনতে সব করা হবে। ইতিমধ্যে ১৭ কোটি ৫৫ লাখ খরচ হয়েছে বলেও তিনি জানান।

আরও পড়ুন