ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক নাবিল হায়দার মারা গেছেন। আজ শুক্রবার ভোরে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি বাসায় নাবিল মারা যান। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি তাঁর ফেসবুকে একটি ভাঙা চশমার ছবি দিয়ে লিখেছিলেন, ‘বিদায়’।
নাবিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের (এসএম হল) আবাসিক ছাত্র ছিলেন তিনি। তাঁর গ্রামের বাড়ি ভোলায়। তাঁর বাবা জসীমউদ্দিন হায়দার। তিনি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এ ছাড়া তিনি স্থানীয় একটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক কমিটিতে (সনজিত চন্দ্র দাস ও সাদ্দাম হোসেন) পদ পেয়েছিলেন নাবিল। তিনি ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী হিসেবে সংগঠনের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।
বন্ধু ও সহপাঠীদের ভাষ্য, অতিরিক্ত ওজনের কারণে নাবিল কিছু শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি গত দুদিন অসুস্থ ছিলেন। গতকাল রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি বাসায় বন্ধুর সঙ্গে ছিলেন তিনি। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিনি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেন। পোস্টটি দেখে ঢাকার বসুন্ধরায় থাকা তাঁর বড় ভাই তৌসিফ তনয় খিলগাঁওয়ের বাসায় যান। পরে তিনি চলে যান। আজ ভোরে সাহ্রির সময় নাবিলকে ঘুম থেকে উঠতে না দেখে বন্ধুর সন্দেহ হয়। তিনি নাবিলকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাঁর বড় ভাই তৌসিফকে বিষয়টি ফোনে জানান।
তৌসিফ প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুক পোস্ট দেখে গতকাল সন্ধ্যায় তিনি নাবিলের বন্ধুর বাসায় যান। সেখানে সে মাঝেমাঝেই যেত। গিয়ে দেখেন নাবিল ঘুমাচ্ছে। তার সামনে ইফতারের প্লেট রাখা ছিল। কিছু ইফতার খেয়েছে, কিছু খায়নি, এমন অবস্থা। কিছুক্ষণ বসে থেকে তাঁর বন্ধুকে কিছু টাকা দিয়ে তিনি চলে আসেন। তাঁর বন্ধুকে বলে আসেন, সে ঘুম থেকে উঠলে যেন তাঁকে ফোন দেয়। এরপর রাতে তাঁর বন্ধুকে ফোন করেন তিনি। তখন তাঁর বন্ধু বলেন, নাবিল ঘুমাচ্ছে। সাহ্রির সময় নাবিলের বন্ধু আমাকে ফোন দিয়ে বলে, সে (নাবিল) নড়াচড়া করছে না, কথাও বলছে না। তিনি দ্রুত ওই বাসায় যান। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, নাবিলের স্বজনেরা জানিয়েছেন, অসুস্থতার কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাঁর মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. মাকসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নাবিলের গতকালের ফেসবুক পোস্ট দেখে অনেকে তাঁর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে ধারণা করছেন। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
মাকসুদুর রহমান জানান, আজ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নাবিলের জানাজা হয়। পরে তাঁর মরদেহ ভোলায় গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। দ্বিতীয় জানাজা শেষে গ্রামের বাড়িতে তাঁকে দাফন করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নাবিলের জানাজায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ তাঁর সহপাঠী-শুভাকাঙ্ক্ষীরা অংশ নেন।
নাবিলের মৃত্যুতে আজ দুপুরে একটি শোকবার্তা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান বলেন, নাবিল আজ ভোর চারটায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে। তারা মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করছে।