মর্গে বিবর্ণ পুতুলের মতো পড়ে থাকা মৃত শিশুটি কার
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের মেঝেতে শুইয়ে রাখা হয়েছে আড়াই থেকে তিন বছর বছর বয়সী একটি মেয়েশিশুর মরদেহ। তার মাথার মাঝখানে বাঁধা ঝুঁটিটি তখনো অক্ষত। পরনে ধূসর রঙের হাফ হাতা গেঞ্জি আর নীল পায়জামা। শিশুটির হাতে, মুখে ও জামাকাপড়ে ছাই লেগে আছে।
পায়ে জুতা নেই, দুই পায়ে দুটো মোজা। বাঁ পায়ের মোজাটি অর্ধেক খোলা। দেখে মনে হচ্ছে কোনো শিশুর অনেক দিন ধরে খেলতে থাকা বিবর্ণ কোনো পুতুল মেঝেতে শুইয়ে রাখা হয়েছে।
রাজধানীর বেইলি রোডে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বহুতল একটি ভবনে আগুন লাগার ঘটনায় শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে গিয়ে দেখা যায়, তার মরদেহটি মেঝেতে শুইয়ে রাখা হয়েছে। তার বুকে সেঁটে রাখা কাগজে পরিচয় লেখা আছে অজ্ঞাতনামা হিসেবে।
মর্গে ফরেনসিক বিভাগের কর্মীরা তার নমুনা সংগ্রহ করছিলেন দেখে শিশুর মৃতদেহটি কাপড়ে ঢাকা ছিল না। তার পাশে শুইয়ে রাখা হয়েছে এক নারীসহ আরও তিনজনের মরদেহ।
রমনা থানার সহকারী উপপরিদর্শক মাসুম আহমেদ বলেন, বেইলি রোডে বহুতল ভবনে আগুন লাগার ঘটনায় মর্গে থাকা এই চারজনের মরদেহ অজ্ঞাতনামা। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগের এক কর্মী, ঢাকা জেলা প্রশাসনের জয় নামের এক কর্মীও এ তথ্য জানিয়েছেন।
গতকাল রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের ভবনটিতে আগুন লাগে। আগুন নেভানোর পর হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়।
যে ভবনে আগুন লেগেছে, সেটি সাততলা। ভবনের দ্বিতীয় তলায় ‘কাচ্চি ভাই’ নামের খাবারের দোকান রয়েছে। তৃতীয় তলায় একটি পোশাকের দোকান ছাড়া ওপরের তলাগুলোতেও রয়েছে খাবারের দোকান। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে খাবারের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় হয়। অনেকেই পরিবার নিয়ে সেখানে খেতে যান।
অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৫ জনে পৌঁছেছে। গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪০ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। ৩৫ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২৭ জনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।