ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে (এফ এইচ হল) চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আটজনকে শনাক্ত করেছে হল প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি। তাঁরা সবাই ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
শনাক্ত আটজনের মধ্যে ছয়জনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা গতকাল শুক্রবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত বুধবার রাতে এফ এইচ হলের অতিথিকক্ষে স্টাম্প দিয়ে দফায় দফায় পিটিয়ে হত্যা করা হয় তোফাজ্জল হোসেন নামের এক যুবককে। ঘটনার পরদিন সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে হল প্রশাসন। সেদিন রাত ১১টায় কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই মামলায় বৃহস্পতিবারই প্রক্টরিয়াল টিমের সহযোগিতায় এফ এইচ হলের ছয় ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এফ এইচ হলের ঘটনায় গঠিত তদন্ত
কমিটির একাধিক সদস্য গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের বক্তব্য ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই আটজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ওই আটজনের নাম–পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ২০২১–২২ শিক্ষাবর্ষের মো. মোত্তাকিন সাকিন শাহ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮–১৯ শিক্ষাবর্ষের মো. জালাল মিয়া, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সুমন মিয়া, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০২০–২১ শিক্ষাবর্ষের আল হোসাইন সাজ্জাদ, গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মো. আহসান উল্লাহ, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মো. ফিরোজ কবির, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মো. আবদুস সামাদ এবং সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ওয়াজিবুল আলম। তাঁদের মধ্যে ফিরোজ কবির ও আবদুস সামাদ ছাড়া অন্য ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ শনাক্ত হওয়া আটজনের নাম নিশ্চিত করেছেন। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ওই আটজন অপরাধের সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তদন্ত প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে প্রাথমিকভাবে এই আটজনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হবে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটা কমিটি করে চূড়ান্ত ব্যবস্থার দিকে যাবে।
ছয়জনের স্বীকারোক্তি
গ্রেপ্তার এফ এইচ হলের ছয় শিক্ষার্থী গতকাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে এক বার্তায় জানান ডিএমপির উপকমিশনার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। তিনি জানান, জবানবন্দি দেওয়া শেষে গ্রেপ্তার ছয়জনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
তোফাজ্জল হত্যা মামলাটি ডিএমপি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে ও নিবিড়ভাবে তদন্ত করছে উল্লেখ করে তালেবুর রহমান আরও বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগরের ঘটনায় মামলা
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার সুদীপ্ত শাহীন মামলাটি করেন।
মামলায় আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃহস্পতিবার রাতেই ধামরাই পৌরসভা এলাকা থেকে ধামরাই সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান খানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে আশুলিয়া থানা-পুলিশ।
মামলায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব, রাজু আহাম্মদ, মাহমুদুল হাসান রায়হান, জুবায়ের আহমেদ, হামিদুল্লাহ সালমান, মো. আতিকুজ্জামান, সোহাগ মিয়া ও মোহাম্মদ রাজন মিয়ার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। শামীম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় এই আটজনকে বৃহস্পতিবারই সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আহম্মদ মুঈদ প্রথম আলোকে বলেন, শামীম হত্যার ঘটনায় হাবিবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এর পাশাপাশি পোশাকশিল্পে অস্থিরতার বিষয়েও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।