হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে এক বছরের শিশু মাহতাব। পাশে দাঁড়িয়ে মা শাহীনুর আকতার। মাহতাবের পাশেই ঘুমাচ্ছে ২৩ মাস বয়সী আরেক শিশু আবু সায়েম। তাকে জড়িয়ে দুই পা গুটিয়ে কোনো রকমে শুয়ে আছেন মা সুমি আকতার।
এ দৃশ্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের। হাসপাতালটিতে শিশুস্বাস্থ্য বিভাগে শয্যাসংকটের কারণে এভাবে দুই শিশুকে এক বিছানায় রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার মাহতাব এসেছে কর্ণফুলী থানাধীন মইজ্যার টেক এলাকা থেকে। আর সায়েমের বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলায়। তাকে চার দিন আগেই ভর্তি করা হয়েছে।
চমেক হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ১৫টি শয্যা রাখা হয়েছে। অথচ আজ শনিবার সেখানে ২৫ শিশু ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি রয়েছে। তাদের মধ্যে একজনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্স জানান, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ব্লক করা হয়েছে। কিন্তু শয্যা খালি না থাকায় এক শয্যায় দুজনকে রেখেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে। সাধারণ রোগীও বেশি। শয্যার প্রায় তিন গুণ রোগী থাকেন এখানে। বিভাগে ৮০ শয্যার বিপরীতে রোগী দুই শর বেশি থাকেন। তাই এক শয্যায় দুজন করে রেখেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সীতাকুণ্ডের বার আউলিয়া থেকে দেড় বছরের ছেলে আলফাজ ইসলামকে নিয়ে গত মঙ্গলবার শিশুস্বাস্থ্য বিভাগে আসেন মা তানিয়া আকতার। আলফাজের এখনো বমি হচ্ছে। মাঝে মাঝে রক্তও যাচ্ছে। শিশুটিকে ঘিরে রয়েছেন মা, নানি ও দাদি। আলফাজের বাবা ঢাকায় গাড়ি চালান।
তানিয়া আকতার বলেন, ‘ও আমার একমাত্র সন্তান। প্রথমে ওর জ্বর আসে। এরপর খিঁচুনি দিয়ে চোখ–মুখ বন্ধ করে ফেলে। তাই হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু এখনো বমি করছে। জ্বরও কমেনি। আমরা তিনজন রাত–দিন এখানে পড়ে আছি। ঘরে আর কেউ নেই।’
আলফাজের পাশে বিভিন্ন বয়সের শিশুর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা ও নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে তারা এখানে এসেছে। ডেঙ্গু ব্লকে জায়গা না হওয়ায় এক শিশুকে রাখা হয়েছে সাধারণ রোগীদের মধে৵। মশারি টানিয়ে সাধারণ ব্লকের এক পাশে চিকিৎসা নেওয়া শিশুটির নাম প্রিয়ন্ত দে (৭)। নগরের খুলশী থেকে গতকাল তাকে ভর্তি করা হয়।
ডেঙ্গু ব্লকের দ্বিতীয় কক্ষে একই বিছানায় চিকিৎসা নিচ্ছে ১৪ মাসের সায়েব বিন ও ৮ মাসের রাইসা। দুজনই এসেছে আগ্রাবাদ থেকে।
রাইসার মা শারমিন বলেন, ‘গতকাল মা ও শিশু হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু শয্যা না থাকায় এখানে চলে আসি।’ একই কথা জানান সায়েবের অভিভাবকেরাও।
এদিকে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে শিশুদের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে আজ শনিবার পর্যন্ত ৭৯ ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে শিশু ৪৩ জন। বাকিরা নারী–পুরুষ।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. নুরুল হক বলেন, ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ায় শয্যাসংকট রয়েছে। ৬৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে অতিরিক্ত শয্যা দিয়ে ডেঙ্গু রোগী রাখা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২ হাজার ৪৪৪ জন। ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২৫ জন। তার মধ্যে ১৪ জনই শিশু।