চট্টগ্রাম নগরে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার ক্রমেই বাড়ছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নগরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি আছেন ৩০ জন। ডেঙ্গুর এমন পরিস্থিতিতে অবশেষে ‘ঘুম’ ভেঙেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। আজ বৃহস্পতিবার ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা নিধনে ১০০ দিনের ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ শুরু করেছে সংস্থাটি।
আজ নগরের প্রবর্তক মোড়ের চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের সামনের চত্বরে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, অনেকেই ছাদবাগান পরিষ্কার করেন না। আবার সিটি করপোরেশনের কর্মীদেরও পরিষ্কার করতে যেতে দেন না। এ অবস্থা প্রতিরোধে প্রয়োজনে ড্রোন কিনে ছাদ পর্যবেক্ষণ করে জরিমানাসহ শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
যেখানে ক্রাশ প্রোগ্রামের উদ্বোধন করা হয়েছে, এর ঠিক পাশে অবস্থিত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সেখানে বুধবার ভর্তি হয়েছেন ১৭ জন। এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ২২ জন। চলতি বছরে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ছেড়েছেন ১২২ রোগী।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডেঙ্গুবিষয়ক সর্বশেষ দৈনিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২১ জুন পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮ জন। নগরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৭০ জন। চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৬৭ জন। চিকিৎসাধীন আছেন ১০৩ জন।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার হার প্রতিদিন বাড়ছে। নগরের পাশাপাশি গ্রাম থেকেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
ডেঙ্গুর এমন পরিস্থিতিতে মশকনিধন কর্মসূচি উদ্বোধনের সময় সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি গবেষণা দল গঠন করেন। তাঁদের পরামর্শে আগামী পাঁচ মাসের জন্য মশা নিধনের ওষুধ কেনা হয়েছে। নগরের ৫৭টি হট স্পটসহ ৪১টি ওয়ার্ডে ১০০ দিনব্যাপী ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করা হবে।
উদ্বোধনের পর সাধারণ মানুষের হাতে সচেতনতামূলক প্রচারপত্র তুলে দেন মেয়র।
ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলেই আসতে হবে হাসপাতালে
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম আহসান বলেন, এ বছর ডেঙ্গুতে যে কজন রোগী মারা গেছেন, তাঁরা সবাই হাসপাতালে একদম শেষ পর্যায়ে ভর্তি হতে এসেছিলেন। অথচ অসুস্থতার প্রাথমিক পর্যায়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে হয়তো তাদের বাঁচানো যেত। এ কারণে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে বা চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন।
বাড়ির আশপাশে মশা প্রজননের স্থান পরিষ্কারের অনুরোধ জানান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সাহেনা আক্তার।
মেয়রের একান্ত সচিব ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, কাউন্সিলর নূর মোস্তফা ও নারী কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্ত, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ হাফিজুল ইসলাম প্রমুখ।