মিরসরাইয়ে বিএনপির দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর, আহত ১১

চট্টগ্রাম জেলার মানচিত্র

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১১ জন। ভাঙচুর করা হয়েছে কয়েকটি ঘর। গত মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক দিদারুল আলম মিয়াজির ছোট ভাই ইকবাল হোসেন, পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সহসাধারণ সম্পাদক ইফতেখার মাহমুদ, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি মিনহাজ উদ্দিন, হিঙ্গুলী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো. সোহান, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য পারভেজ, যুবদল কর্মী জিয়া উদ্দিন, মনোয়ারা বেগম, রাইমা আক্তার, ইমাম উদ্দিন ও জয়নাল আবেদিন।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ইকবাল হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁকে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মাঈন উদ্দিন, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদুল ইসলাম, সাবেক পৌর কমিশনার জসিম উদ্দিন ও নিজাম উদ্দিনের ঘর।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বারইয়ারহাট বিএনপির সাবেক সভাপতি মাঈন উদ্দিনের অনুসারী জিয়া উদ্দিন নামের যুবদলের এক নেতা পৌর বাজারের একটি ভাঙারি দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলেন। এক ভাঙারি দোকানির কাছ থেকে এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে বিএনপির নেতা দিদারুল আলম মিয়াজি মঙ্গলবার বিকেলে জিয়াকে গালমন্দ করেন। একই সঙ্গে চাঁদাবাজি করলে দলীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জিয়া উদ্দিনকে সতর্ক করা হয়।

জিয়া উদ্দিনকে গালমন্দের বিষয়টি শুনে মাঈন উদ্দিনের অনুসারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ধ্যার পর দেশি অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে দিদারুল আলম মিয়াজির অনুসারীদের ওপর হামলা করেন। এতে দিদারুল আলম মিয়াজির ছোট ভাই যুবদলের নেতা ইকবাল হোসেনসহ সাতজন আহত হন। হামলায় ইকবাল হোসেন মাথায় গুরুতর আঘাত পান। এ ঘটনার পর রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে দিদারুল আলমের অনুসারীরা মাঈন উদ্দিন ও তাঁর অনুসারী বিএনপির তিন নেতার বাড়িতে ভাঙচুর করেন। এ সময় চারজন আহত হন।

জানতে চাইলে পৌর বিএনপির আহ্বায়ক দিদারুল আলম মিয়াজি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাঁদাবাজির বিষয়ে বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মাঈন উদ্দিন গ্রুপের এক নেতাকে সতর্ক করায় দেশি অস্ত্রসহ আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। মাঈন উদ্দিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলা লোক। এখন সুসময়ে এসে বড় নেতা সাজতে চাচ্ছেন।’

বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক কমিশনার জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মাঈন উদ্দিনের নেতৃত্বে আমরা বাজারে চাঁদাবাজি রুখে দিতে বিক্ষোভ মিছিল করি। এতে দিদারুল আলম মিয়াজি আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। মঙ্গলবার রাতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই দিদারুল আলম মিয়াজির নেতৃত্বে বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মাঈন উদ্দিন, যুগ্ম আহ্বায়ক  সাইদুল ইসলাম, নিজাম উদ্দিন কমিশনার ও আমার বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। আমার বাড়ির আটটি কক্ষের সব আসবার ভাঙচুর করে ১ লাখ ৩০ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে।’

বারইয়াহাট পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘মিয়াজি মিরসরাইয়ে বিএনপির রাজনীতিতে বিভেদ সৃষ্টিকারী এক নেতার লোক। দল ক্ষমতায় আসার আগেই দিদারুল আলম মিয়াজি বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এলাকায় আমার জনপ্রিয়তা তাঁর এ স্বপ্ন পূরণে বাধা হতে পারে, তাই ক্ষমতা দেখানোর জন্য তিনি বিএনপির ত্যাগী নেতাদের বাড়িঘরে হামলা করেছেন।’

জোরারগঞ্জ থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক তারিমুজ্জামান বলেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পায়নি। এ বিষয়ে এখনো থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।