ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় ৯ মাস ধরে কারাগারে আছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা। কারাগারে থাকায় তিনি গত ঈদুল ফিতর পরিবারের সঙ্গে উদ্যাপন করতে পারেননি। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাও তাঁর কারাগারে কাটবে।
খাদিজার মা ফাতেমা খাতুন গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়ে কারাগারে থাকায় গত ঈদ (ঈদুল ফিতর) আমাদের জন্য ছিল বিবর্ণ। কোরবানির ঈদের (ঈদুল আজহা) আগেই মেয়ে কারামুক্ত হবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু দিনকয়েক আগে জানতে পারি, খাদিজার জামিন বিষয়ে শুনানি হবে ঈদুল আজহার পর। তার মানে, কোরবানির ঈদেও আমরা তাঁকে পাচ্ছি না।’
খাদিজা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অনলাইনে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচারসহ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে খাদিজা ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। একটি মামলা রাজধানীর কলাবাগান থানায়, অপরটি নিউমার্কেট থানায়। দুটি মামলার বাদীই পুলিশ। গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর খাদিজাকে গ্রেপ্তার করে নিউমার্কেট থানা-পুলিশ। তখন থেকে তিনি কারাগারে।
আদালত ও আইনজীবী সূত্রের তথ্যমতে, বিচারিক আদালতে দুবার খাদিজার জামিন আবেদন নাকচ হয়। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই জামিন আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার বিচারপতি। এখন আবেদনটি আপিল বিভাগে শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।
খাদিজার আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৯ মে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে তাঁর মক্কেলের (খাদিজা) জামিনের বিরোধিতা করে বক্তব্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১০ আগস্ট তারিখ রেখেছেন আপিল বিভাগ। ফলে খাদিজাকে কারাগারেই থাকতে হচ্ছে।
খাদিজাদের গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ। তবে তাঁর বেড়ে ওঠা ঢাকায়। তাঁর পরিবার থাকে রাজধানীর মিরপুরে। এখন দুই ছেলে-মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মিরপুরের বাসায় আছেন ফাতেমা। খাদিজার বড় বোন সিরাজুম মুনিরা, তিনি স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। ছোট ভাই মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। খাদিজার বাবা বিদেশে থাকেন।
ফাতেমা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় ৯ মাস হয়ে গেল খাদিজা কারাগারে। খাদিজাকে ছাড়াই আমাদের রোজার ঈদ গেছে। আশা করেছিলাম, কোরবানির ঈদে তাঁকে আমরা পাব। কিন্তু আমাদের আশা পূরণ হবে না।’
খাদিজার মুক্তি চেয়ে তাঁর মা ফাতেমা বলেন, ‘যেদিন থেকে মেয়ে আমার কারাগারে, সেদিন থেকে আমাদের সুখ-শান্তি সব শেষ। জানি না, কবে মেয়ে মুক্তি পাবে? খাদিজা মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের শান্তি নেই।’
খাদিজার বড় বোন সিরাজুম মুনিরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ মাস ধরে খাদিজার লেখাপড়া বন্ধ। সে কারাগারে থাকায় আমরা ভালো নেই। আমরা ন্যায়বিচার চাই। খাদিজার মুক্তি চাই।’
এক সপ্তাহের ব্যবধানে খাদিজা ও দেলোয়ারের বিরুদ্ধে মামলা দুটি হয়েছিল। দুই মামলার এজাহারের অভিযোগ প্রায় একই রকম। মামলার অভিযোগে বলা হয়, খাদিজা ও দেলোয়ার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের বৈধ সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মনগড়া, বানোয়াট, মিথ্যা, মানহানিকর অপপ্রচার চালিয়ে আসছিলেন। আসামিরা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ সৃষ্টির অপচেষ্টাসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের প্রয়াস চালিয়েছেন।
গত বছরের মে মাসে দুই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এ অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে মিরপুরের বাসা থেকে খাদিজাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর দেলোয়ার বিদেশে পলাতক। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, মামলা দুটি অভিযোগ গঠনের শুনানির পর্যায়ে রয়েছে।