পিলখানার বিডিআর ট্র্যাজেডি ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’, মন্তব্য মির্জা ফখরুলের
পিলখানার বিডিআর ট্র্যাজেডিকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এর উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের গর্ব সেনাবাহিনীর মনোবলকে ভেঙে দেওয়া। কিন্তু এ ঘটনায় প্রকৃত অপরাধী এবং এর পেছনে কারা ছিলেন, সেটি বের করার জন্য যে তদন্তপ্রক্রিয়ার দরকার ছিল, সেটি সেভাবে হয়নি।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর বনানীর সামরিক কবরস্থানে বিডিআর ট্র্যাজেডিতে শহীদ সেনাসদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি, এ ঘটনার যেভাবে তদন্ত হওয়ার দরকার ছিল, যেভাবে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের এবং এর পেছনে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের বের করে নিয়ে আসার যে তদন্তপ্রক্রিয়া হওয়া দরকার ছিল, সেটি দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের এখানে সংঘটিত হয়নি। আমরা পত্রপত্রিকায় দেখেছি, সেনাবাহিনী একটা তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। সেটার পূর্ণাঙ্গ যে চেহারা, এই চেহারা কিন্তু দেশবাসী জানতে পারেনি।’
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ পিলখানায় সংঘটিত হত্যাযজ্ঞকে এ দেশের বিরুদ্ধে, এই জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে অত্যন্ত পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার মধ্য দিয়ে যে প্রচেষ্টাটি চালানো হয়েছে, এর উদ্দেশ্য ছিল আমদের গর্ব সেনাবাহিনীর মনোবলকে ভেঙে দেওয়া। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষার জন্য যাঁরা প্রাণ উৎসর্গ করেন, যাঁরা শপথ নিয়েছেন, তাঁদের এইভাবে নৃশংসভাবে, অন্যায়ভাবে, বেআইনিভাবে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছিল।’
এ ঘটনার বিচার-বিলম্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, প্রায় সাত হাজারের মতো সৈনিক, যাঁরা অনেকেই দাবি করেন যে তাঁরা সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁদের মামলার শুনানিই শেষ করা হয়নি। তাঁরা প্রায় ১৩-১৪ ধরে কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাঁদের পরিবার নষ্ট হয়ে গেছে, তাঁদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে গেছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে দাবি করব, যে অভিযোগ তাঁদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, যে বিচারিক সমস্যাগুলো আছে, তা অতি দ্রুত সম্পাদন করে তাঁদের একটা ব্যবস্থা করা উচিত। তাঁদের মুক্তি দেওয়া উচিত। তখন শুনেছিলাম সাধারণ ক্ষমাও করা হয়েছে। আমি আজকে দাবি করব, এ মানুষগুলোকে, তাঁদের পরিবারগুলোকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।’
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা বলছেন এটা দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র, সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য। কারা আসলে ষড়যন্ত্র করেছে?’
জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এই কারা, বিষয়টা তো উদ্ধার করবেন সেনাবাহিনীর যে তদন্ত হয়েছে তাঁরা, সেই তদন্ত থেকে বেরিয়ে আসবে। যাঁরা দায়িত্বে রয়েছেন সঠিক সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য—তাঁরা এগুলোকে বের করে নিয়ে আসবেন। আমরা রাজনৈতিকভাবে যেটা লক্ষ করেছি, এটা একটা চক্রান্ত ছিল দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে।’
বিএনপির আগেই সকালে শহীদ সেনাসদস্যদের প্রতি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এক সাংবাদিক জানান, সেখান থেকে একটা অভিযোগ এসেছে, পিলখানায় ট্র্যাজেডির ঘটনার দিন সকাল থেকে বেগম খালেদা জিয়ার গতিবিধি এবং আচরণ ছিল রহস্যজনক। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম এটা সম্পূর্ণ দায়িত্বহীন বক্তব্য বলে মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এত বড় একটি ঘটনা, যে ঘটনায় সমগ্র জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই ঘটনাগুলোকে কোনো একজন ব্যক্তি, যাঁর সম্পর্কে বলা হচ্ছে তিনি (খালেদা জিয়া) এ দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বাংলাদেশের প্রথম সেনাপ্রধানের এবং স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ছিলেন। তিনি এই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সারাটা জীবন লড়াই করছেন এবং এখনো কারাবন্দী রয়েছেন। সুতরাং এ ধরনের বক্তব্য হচ্ছে ঘটনাকে ডাইভারশন করা।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ওনাদের মূল সমস্যাটা হচ্ছে, ওনার সমস্যার মূলে না গিয়ে সব সময় অন্যদিকে যেতে চান। কারণ, এ ঘটনাগুলো তাঁরা সেভাবে সমাধান করতে পারেননি। এ প্রসঙ্গে তিনি দেশের চলমান সংকট নিয়েও কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এই দিনে বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীসহ অন্য যে বাহিনীগুলো রয়েছে, সবাই আমরা একসঙ্গে এ দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে চাই। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হচ্ছে আমাদের সব চেয়ে বড় সম্পদ। এই জন্য আজকে যেটা প্রয়োজন, সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধে যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চেতনা ছিল, সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আমরা ফিরে পেতে চাই।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা মনে করি, সব সংকটের মূলে রয়েছে এখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধার করা, সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু, অবাধ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। সেটার মধ্য দিয়ে সব সংকটের সমাধান করতে পারব।’
এর আগে মির্জা ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে দলের নেতা-কর্মীরা সামরিক কবরস্থানে শায়িত শহীদ সেনাসদস্যদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং দোয়া করেন। এ ঘটনায় বিডিআর কর্মকর্তা এবং তাঁদের পরিবারবর্গ যাঁরা সেদিন শহীদ হয়েছেন, তাঁদের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা এবং আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন বিএনপির মহাসচিব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) ফখরুল আজম, রিয়ার অ্যাডমিরাল মুস্তাফিজুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জহুরুল আলম, কর্নেল ফয়সাল, কর্নেল জয়নুল আবেদীন, লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ কামরুজ্জামান, মেজর (অব.) মো. হানিফ, মেজর (অব.) মিজানুর রহমান, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) কোহিনূর আলম নূর, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হারুনুর রশিদ ভূঁইয়া প্রমুখ।