শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পাশ্চাত্যসহ বিভিম্ন জায়গার শিক্ষা নিলেও তাঁর কাজের সঙ্গে গ্রামবাংলার মাটির সম্পর্ক। তিনি মজলুমের পক্ষে ছিলেন, সত্য বলতেন।
গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে জয়নুল উৎসবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলা হয়।
বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলার পথিকৃৎ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১১০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চলা তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের দ্বিতীয় দিনে ছিল স্মারক বক্তৃতা।
এতে অধ্যাপক আবদুস সাত্তার ‘দার্শনিক শিল্পী জয়নুলের বাংলা দর্শন’ নামে নিজের লেখা প্রবন্ধ পাঠ করেন। তিনি বলেন, বস্তুকে, প্রতিটি দৃশ্যকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা ও নিজ অনুভূতিতে তা একাত্ম করে নেওয়া ছিল জয়নুলের প্রধান গুণ। এই দেখা ও অনুভবের অপ্রতিরোধ্য শক্তির কারণেই তার চিত্র স্বাভাবিক দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি না হয়ে সিগনিফিকেন্ট ফর্মে রূপান্তরিত হয়েছে।
অধ্যাপক আবদুস সাত্তার বলেন, জয়নুলকে পশ্চিমা ধারার শিল্পী মনে করা হলেও তার অসংখ্য চিত্রে বাংলা এবং বাংলার প্রাচ্যধারার প্রভাব স্পষ্ট। তার প্রায় সব শিল্পের সঙ্গেই রয়েছে মাটির সম্পর্ক।
অধ্যাপক সাত্তার আরও বলেন, মুসলিম লীগের শাসনামলে জয়নুল দুর্ভিক্ষের ছবি আঁকায় তৎকালীন সরকার তার ওপর খুশি ছিলেন না। তিনি সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে সরকার। কিন্তু সরকারের কাছে তিনি মাথানত করেননি।
শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোস্তফা জামান বলেন, জয়নুলের কাজে ঐতিহ্যের মিশ্রতা আছে। সত্য বলার ও মজলুমের পাশে থাকার স্পৃহা ও স্বপ্ন ছিল। জয়নুল শ্রেণিকে দেখেছেন বাস্তবতা থেকে। তাঁর ছবি অভিজাত শ্রেণির আয়েশি ভাবনার সঙ্গে ছেদ টেনে মজলুমের পক্ষে বয়াননির্ভর।
সভাপতির বক্তব্যে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলাম শেখ বলেন, জয়নুলকে সব সময় গবেষণা, দর্শনে আনতে চেষ্টা করা হয়। তার আদর্শকে লালন করে এগিয়ে যেতে হবে।
জয়নুল, শাহাবুদ্দিন, সুলতান, কামরুল হাসানের মতো শিল্পীদের কাজ নিয়ে গবেষণা ও আলোচনা হওয়ার জন্য একটি গবেষণা কেন্দ্র হওয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।