আগ্রাসী আচরণ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে: ইফতেখারুজ্জামান

বন্ধুসভার বন্ধুদের দুর্নীতিবিরোধী শপথ পাঠ করান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানছবি: দীপু মালাকার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুধু স্বৈরাচার পতনের জন্য ছিল না। এর আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল সম-অধিকারভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। তবে অনেকেই এখন আগ্রাসী আচরণ চাপিয়ে দিতে চাচ্ছেন। বাংলাদেশের সংস্কৃতির ওপর হামলা করছেন। হামলা-মামলা করে গণমাধ্যমকে থামিয়ে দিতে চাচ্ছেন।

প্রথম আলো বন্ধুসভার ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক এবং দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মিলনায়তনে গতকাল সোমবার বিকেলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন শুধু স্বৈরাচার পতনের জন্য ছিল না। এর আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল সম–অধিকারভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। যাঁরা আজ নিজেদের ক্ষমতায়িত ভাবছি, তাঁদের সবার কাছে ‘বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ’ কথাটির চেতনা, ধারণা, অভীষ্ট কি এক?

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘যাঁরা আগ্রাসী আচরণ চাপিয়ে দিতে চাচ্ছেন, বাংলাদেশি সংস্কৃতির ওপর হামলা করছেন, লালন ও সুফিচর্চা ধ্বংস করছেন, গণমাধ্যমের ওপর ট্যাগ লাগিয়ে হামলা-মামলা করে তাদের থামিয়ে দিতে চাইছেন, তাঁরাও এই স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে নিজেদের দাবিদার বলে মনে করে এ কাজগুলো করছেন।’

এরপর অনুষ্ঠানে উপস্থিত বন্ধুসভার সব সদস্য ও অতিথিদের নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী শপথ পাঠ করেন ইফতেখারুজ্জামান। এ সময় প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে সামাজিক, রাজনৈতিক, রাষ্ট্রীয়—সব স্থানে দুর্নীতির সঙ্গে কখনো আপস না করার শপথ নেন। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যাঁদের হাতে ক্ষমতা থাকে, তাঁদের সদিচ্ছা ছাড়া দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ হয় না।

অনুষ্ঠানে চিত্রনির্মাতা আশফাক নিপুনের বক্তব্যে উঠে আসে ব্যক্তিপর্যায় থেকে রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি ছড়িয়ে থাকার উদাহরণ। তিনি বলেন, ‘এমনও অনেক দুর্নীতি আছে, যেগুলোকে আমরা অন্যায় বলেও চিহ্নিত করতে পারি না।’ এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন শিক্ষার্থী প্রাপ্তি তাপসীসহ কয়েকজন।

অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, ‘লড়াইটা কেবল শুরু হয়েছে। অনেক দূর আমাদের নিয়ে যেতে হবে। বিপ্লবের মধ্য দিয়ে নতুন মানুষ তৈরি হবে।’ এ সময় তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় দেয়ালে আঁকা অনেকগুলো পাতাসমেত একটি গাছের গ্রাফিতির উদাহরণ টেনে বলেন, ‘এই কথাটা যেন আমরা ভুলে না যাই যে সবাইকে নিয়ে আমাদের দেশ।’

প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন বলেন, বন্ধুসভা নিঃস্বার্থভাবে ২৬ বছর ধরে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। অন্যের বিপদে সব সময় পাশে থাকে বন্ধুসভা।

বন্ধুসভার ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম আলো বন্ধুসভা থিম সং পরিবেশন করে। এর সুর করেছেন কবির বকুল। লিখেছেন দন্ত্যস রওশন। বন্ধুসভার প্রতিবেদন পড়ে শোনান ফরহাদ হোসেন।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সারা দেশ থেকে অংশ নেন বন্ধুসভার অনেক বন্ধু। অনুষ্ঠানে এ বছরের জানুয়ারি থেকে কী কী কাজ করা হয়েছে তার একটি সারমর্ম উপস্থাপন করা হয়। এ আয়োজনে বৃক্ষরোপণ ও সহমর্মিতার ঈদ কার্যক্রমের জন্য সারা দেশের সেরা ২০টি বন্ধুসভাকে সম্মাননা দেওয়া হয়। আরও ১০টি বন্ধুসভাকে দেওয়া হয় সেরাদের সেরা স্বীকৃতি।

নানা আয়োজন আর গুরুজনের পরামর্শে দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার প্রত্যয় নিয়ে শেষ হয় আয়োজন। অনুষ্ঠানে লাইফস্টাইল সহযোগী ছিল টুয়েলভ ক্লদিং, রিফ্রেশমেন্ট সহযোগী ইস্পাহানি, এন্টারটেইনমেন্ট সহযোগী চরকি আর নিউট্রিশন সহযোগী হিসেবে ছিল নিউট্রিপ্লাস।