২৪ ঘণ্টার মধ্যে গুম–খুনে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করার দাবি মায়ের ডাকের

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ বুধবার মানববন্ধন করে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ছবি: প্রথম আলো

সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গত ১১ বছরে যাঁরা গুম–খুনে জড়িত ছিলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’।

আজ বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়েছে। আগের দিন মায়ের ডাকের একটি প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে নিজেদের দাবির কথা জানায়।

মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম মানববন্ধনে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন। তাঁরা এ সরকারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে (গুম–খুনে) জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা তাঁকে বলেছেন, তাঁদের যেন আবার রাস্তায় দাঁড়াতে না হয়।

যাঁরা গুম করেছেন, তাঁরা যেন কেউ দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন। যত আয়নাঘর আছে, সব ভেঙে একটি আয়নাঘর হবে; যেখানে শেখ হাসিনাকে রাখা হবে। উনি বুঝুক, আয়নাঘর কাকে বলে। এটা মায়ের ডাকের দাবি। যাঁরা তাঁর সঙ্গে জড়িত, তাঁদেরও শাস্তি হোক।
ফারজানা আক্তার, গুমের শিকার বংশাল থানা ছাত্রদলের সভাপতি পারভেজ হোসেনের স্ত্রী

গুম–খুনের ঘটনায় জাতীয় টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ সংশ্লিষ্ট অন্যদের গ্রেপ্তার করে জবানবন্দি গ্রহণের দাবি জানিয়েছে মায়ের ডাক।

গুমের শিকার রাজধানীর বংশাল থানা ছাত্রদলের সভাপতি পারভেজ হোসেনের স্ত্রী ফারজানা আক্তার বলেন, ‘যাঁরা গুম করেছেন, তাঁরা যেন কেউ দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন। যত আয়নাঘর আছে, সব ভেঙে একটি আয়নাঘর হবে; যেখানে শেখ হাসিনাকে রাখা হবে। উনি বুঝুক, আয়নাঘর কাকে বলে। এটা মায়ের ডাকের দাবি। যাঁরা তাঁর সঙ্গে জড়িত, তাঁদেরও শাস্তি হোক।’

অধিকারের সভাপতি অধ্যাপক আবরার চৌধুরী বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের নিয়ে আগের সরকার ঠাট্টা-মশকরা করেছে। সেসবের ফল তারা এখন ভোগ করছে। ইঁদুরের মতো লুকিয়ে বেড়াচ্ছে। জনগণ তাদের কাঠগড়ায় নিয়ে আসবে।

মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সভাপতি অধ্যাপক আবরার চৌধুরী বলেন, গুমের শিকার এই ব্যক্তিদের নিয়ে আগের সরকার ঠাট্টা–মশকরা করেছে। সেসবের ফল তারা এখন ভোগ করছে। ইঁদুরের মতো লুকিয়ে বেড়াচ্ছে। জনগণ তাদের কাঠগড়ায় নিয়ে আসবে।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম
ছবি: প্রথম আলো

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যাঁরা এখন ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা পুরো ব্যবস্থার খোলনলচে পাল্টে দেবেন বলে তিনি আশা করেন। আরও আশা করেন, সরকার মায়ের ডাকের আকুতি গুরুত্বের সঙ্গে নেবে। দোষী ব্যক্তিদের যত দ্রুত সম্ভব, দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।

এদিকে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে তাদের স্বজনদের সন্ধান এ সরকার দেবে বলে আশা করেন নারীপক্ষের শিরিন হক।

মানববন্ধনে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন
ছবি: প্রথম আলো

মানববন্ধনে আনিশা ইসলাম বলেন, তাঁর বাবা ইসমাইল হোসেন বাতেনকে ২০১৯ সালের ১৯ জুন মিরপুরে নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে গুম করা হয়। ছয় বছর ধরে তিনি বাবাকে খুঁজছেন। আগের সরকার কোনো আকুতি শোনেনি। দেশ দ্বিতীয়বার ‘স্বাধীন’ হয়েছে। এখন বাবার খোঁজ চান তিনি।

আরও পড়ুন

গুমের শিকার সাজেদুল ইসলাম সুমনের সন্ধান চেয়ে স্ত্রী নাসিমা আক্তার শেখ হাসিনার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাজা দাবি করেন। বলেন, ‘অনেক জায়গায় ঘুরেছি। কিন্তু কেউ খোঁজ দেয়নি।’

আরও পড়ুন