শাম্মী ও সাদিকের আবেদনের শুনানি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ২ জানুয়ারি
প্রার্থিতা ফিরে পেতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাম্মী আহমেদ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর পৃথক আবেদন আগামী ২ জানুয়ারি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
দুজনের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম শুনানির এই দিন ধার্য করেন।
শাম্মী আহমেদ বরিশাল-৪ আসনে এবং সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বরিশাল–৫ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
শাম্মীর দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রশ্নে লড়াই
দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় রিটার্নিং কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং হাইকোর্টে প্রার্থিতা ফিরে পেতে বিফল হন শাম্মী আহমেদ। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে গিয়েও ১৯ ডিসেম্বর ‘নো অর্ডার’ পান। ফলে শাম্মী আহমেদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া আটকে যায়।
এ অবস্থায় প্রার্থিতা ফিরে পাওয়াসহ প্রতীক বরাদ্দের নির্দেশনা চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শাম্মী, যা আজ চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। আদালত আবেদনটি আগামী ২ জানুয়ারি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেছেন।
শাম্মী আহমেদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। পরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রিট খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ সংশোধন করে শাম্মী আহমেদকে প্রতীক বরাদ্দের নির্দেশনা চেয়ে আবেদনটি করা হয়। কারণ, অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাস থেকে তাঁর নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। দূতাবাসে গত ২৭ নভেম্বর আবেদনটি করা হয়েছিল। আবেদনটি অনুমোদিত হলে তা ২৭ তারিখ থেকেই কার্যকর হবে। তাই নির্বাচনের জন্য আদালত অনুমতি দিতে পারেন।
প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিলে সাদিক আবদুল্লাহ
বরিশাল-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন সাবেক সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। কিন্তু তাঁকে দল মনোনয়ন দেয়নি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান বর্তমান সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে আসনটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন সাদিক আবদুল্লাহ।
তাঁর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তবে যুক্তরাষ্ট্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব ও হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ এনে সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়ন বাতিল চেয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল করেন জাহিদ ফারুক। অন্যদিকে জাহিদ ফারুকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে সাদিক আবদুল্লাহও ইসিতে আপিল করেন। শুনানি শেষে ১৫ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন জাহিদ ফারুকের আপিল মঞ্জুর করে। আর সাদিক আবদুল্লাহর আপিল নামঞ্জুর করে।
নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নিজের প্রার্থিতা ফিরে পেতে এবং জাহিদ ফারুকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে সাদিক আবদুল্লাহ হাইকোর্টে পৃথক দুটি রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে সাদিক আবদুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল করে দেওয়া ইসির সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। একই সঙ্গে সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করে তাঁকে প্রতীক বরাদ্দ দিতে নির্দেশ দেন। ফলে তাঁর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ খোলে। তবে জাহিদ ফারুকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে সাদিক আবদুল্লাহর করা অপর রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
সাদিক আবদুল্লাহর প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়াসংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন জাহিদ ফারুক। এর ওপর ১৯ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানি হয়। শুনানি নিয়ে সেদিন আদালত সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করে তাঁকে প্রতীক বরাদ্দ দিতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। সাদিক আবদুল্লাহর ভোটের লড়াই আটকে যায়।
এ অবস্থায় ১৯ ডিসেম্বরের আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে সাদিক আবদুল্লাহ আবেদন করেন, যা আজ চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। আদালতে সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। জাহিদ ফারুকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম।
পরে সাদিক আবদুল্লাহর আইনজীবী খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, সাদিক আবদুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন। তাঁকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা তাঁর মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। এসব দিক তুলে ধরে ১৯ ডিসেম্বর চেম্বার আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে সাদিক আবদুল্লাহ আবেদনটি করেন।
এদিকে সাদিক আবদুল্লাহর প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়াসংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আবেদন করেছে, যা আজ চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। এ বিষয়ে ইসির আইনজীবী মো. ইয়াছিন খান প্রথম আলোকে বলেন, এই আবেদনও আপিল বিভাগে আগামী ২ জানুয়ারি একসঙ্গে শুনানি হবে।