শিক্ষক নেটওয়ার্কের বিবৃতি
‘আদিবাসী শিক্ষার্থী-জনতা’র ওপর হামলার নিন্দা, জনস্বার্থবিরোধী রাজনীতি চলতে দেওয়া যাবে না
‘আদিবাসী শিক্ষার্থী-জনতা’র কর্মসূচিতে হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এ সংগঠন বলছে, ফ্যাসিস্ট তরিকায় আর কোনো নিষ্পেষণমূলক ও জনস্বার্থবিরোধী রাজনীতি বাংলাদেশে চলতে দেওয়া যাবে না। রাষ্ট্রের নীতিমালা নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংখ্যালঘিষ্ঠ জাতি-ধর্ম-গোষ্ঠী-গোত্র-সম্প্রদায়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাহলেই প্রত্যাশিত ভেদাভেদহীন, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ রচিত হবে।
আজ শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। ৭৮ জন শিক্ষকের পক্ষে গণমাধ্যমে বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সংবিধান সংস্কার কমিশন রাষ্ট্রের সাংবিধানিক নাম ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ ও রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে সংবিধানে ‘বহুত্ববাদ’কে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করে খসড়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যেদিন এটি জমা দেওয়া হলো, ঠিক সেদিন ও পরের দিন এই রাষ্ট্রের তথাকথিত জাতিগরিমার বলি হয়েছে বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠী। তাদের গণতান্ত্রিক নাগরিক অধিকারের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে হামলা করেছে সংখ্যাগুরুর আত্মরম্ভিতায় উজ্জীবিত সন্ত্রাসীরা ও রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনী।
শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলছে, ‘গণতন্ত্রের জন্য আমাদের যে দীর্ঘ সংগ্রাম, সেটারই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে আমরা সদ্যই সমতা, বৈষম্যহীনতা, সম–অধিকার আর সমমর্যাদার উদ্দেশ্যে সমবেত হয়েছিলাম চব্বিশের জুলাই-আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানে। সেই সমবায়ের অংশীদার হয়েও বিগত সময়ের মতো “বৈষম্যহীন বাংলাদেশে”ও নিজেদের “ঝরাপাতা” হিসেবে আবিষ্কার করা আদিবাসী শিক্ষার্থী-জনতা স্বভাবতই আজ ক্ষুব্ধ। তাদের এই ক্ষুব্ধতার সঙ্গে আমরাও সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করি এবং তাদের প্রতি রাষ্ট্র-সরকার ও সংখ্যাগুরুর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বহুত্ববাদী সংস্কৃতিতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণিনির্বিশেষে পরিচিতির সম্মিলন বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য তৈরি করবে, এটিই হলো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। বাংলাদেশেও এই গণ–আকাঙ্ক্ষা বিদ্যমান। সেই আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে বৈচিত্র্যের মধ্যে জাতীয় ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেওয়া একটি বৃক্ষের ছবি জুলাই আন্দোলনের দেয়ালচিত্র (গ্রাফিতি) হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল।
‘আদিবাসী শিক্ষার্থী-জনতা’র কর্মসূচিতে হামলাকারী সবাই এবং তাদের মদদদাতাদের রাজনৈতিক পরিচয় জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পরিচয় প্রকাশের পরপর যথাযথ প্রক্রিয়ায় আমরা এই ফৌজদারি অপরাধের শাস্তি চাই। সহিংস উদ্দেশ্যে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের কারণে এদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই। সরকার এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে অবশ্যই এই প্রচ্ছদ বাতিলের কারণ দর্শাতে হবে। সন্তোষজনক জবাব না থাকলে মেরুদণ্ডহীনতার পরিচয় দেওয়া সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তিস্বরূপ অপসারণ করতে হবে।’
বিবৃতিদাতা শিক্ষকদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজিমউদ্দীন খান, অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, সৌমিত জয়দ্বীপ, মোহাম্মদ শাহান, মাহমুদা আকন্দ, কাজলী সেহরীন ইসলাম, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী, ফাতেমা শুভ্রা, অধ্যাপক আ-আল মামুন, অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, অধ্যাপক কামাল চৌধুরী, রুশাদ ফরিদী, অধ্যাপক আইনুন নাহার, সামিনা লুৎফা, মোশাহিদা সুলতানা প্রমুখ।