চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতায় ডুবল মেয়রের বাড়ির উঠান
বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা আর ভোগান্তি যেন চট্টগ্রামবাসীর নিত্যদিনের ঘটনা। সামান্য বৃষ্টিতে সড়ক ছাপিয়ে ঘরের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায় পানি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে ডুবেছে চট্টগ্রাম নগরের অনেক এলাকা। বাদ যায়নি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়ি। হাঁটুপানিতে ডুবেছে মেয়রের বাড়ির উঠান, সামনের রাস্তা।
মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকায়। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেয়রের বাড়ির সামনের রাস্তায় পানি জমে আছে। দোতলা বাড়ির উঠানেও জমেছে হাঁটুপানি। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, গত রাতে বৃষ্টি শুরুর পর থেকে সামনের রাস্তায় পানি জমতে শুরু করেছিল। আজকে ভোরের ভারী বৃষ্টিতে পানি উঠানে চলে আসে।
দোতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। ভবনটির নিচতলা ব্যবহার করা হয় ঘরোয়া বৈঠক, নেতা-কর্মী ও দর্শনার্থীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায়। মেয়রের একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী মোস্তফা জামাল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আজ ছুটির দিনে মেয়রের বাসাতেই আছেন।
মোস্তফা জামাল চৌধুরী আরও বলেন, ‘এর আগেও মেয়রের বাড়ির উঠান ও সামনের রাস্তায় পানি উঠেছিল। গত বছর কয়েকবার পানি উঠেছিল। তবে এবারের বর্ষায় আজ প্রথম পানি উঠল।’
জলাবদ্ধতায় সীমাহীন দুর্ভোগ
চট্টগ্রামে গতকাল রাত ৯টা থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল বলেন, আরও দুদিন থাকবে বৃষ্টি।
রাত থেকে চলা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার, বউবাজার, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, খাজা রোড, ফরিদার পাড়া, খতিবেরহাট, বারোই পাড়া, খরমপাড়া, বাকলিয়া, চাক্তাই, চান্দগাঁও, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি জমেছে। কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও হাঁটু, কোথাও–বা গোড়ালিপানি।
চকবাজারের মুহাম্মদ আলী শাহ দরগাহ লেনে গিয়ে দেখা যায়, হাঁটুপানি জমে আছে গলিতে, বাড়ির উঠানে। বাড়ির ভেতর থেকে পানি সরাচ্ছিলেন কেউ কেউ। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল হামিদ বলেন, ভোর থেকে বেশি পানি জমেছে। চুলা জ্বালানোরও সুযোগ নেই। তাই বাইরের দোকান থেকে খাবার কিনে আনতে হয়েছে।
একই এলাকায় দুই কক্ষের একটি সেমি পাকা বাড়িতে ভাড়া থাকেন মোহাম্মদ জয়নাল। তিনি জানালেন, এ এলাকায় নতুন এসেছেন তিনি। আগে ছিলেন হিলভিউ এলাকায়। সেখানে পানি উঠত না। এখন অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রান্নার চুলা জ্বলছে না। দুই সন্তানকে দোকান থেকে সকালের নাশতা কিনে খাইয়েছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার ও চকবাজারে (কাঁচাবাজার) পানি জমেছে। মোহাম্মদ হোসেন নামের বহদ্দারহাটের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, ‘পানি জমে থাকায় বেচাকেনা কমে গেছে। ক্রেতা আসছে না। অথচ শুক্রবার বিক্রিবাট্টা বেশি হওয়ার কথা।’
যে কারণে জলাবদ্ধতা
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার কারণ অনুসন্ধানে গত বছর চার সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়েছিল। কমিটিতে প্রধান করা হয়েছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসকে। ওই কমিটি জলাবদ্ধতার কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো অতিবর্ষণ ও কর্ণফুলী নদীতে পূর্ণিমার সময় অতিরিক্ত জোয়ার, খালের পরিধি কমে আসা, নগরের খাল ও নালা-নর্দমা বেদখল, অসচেতনতার কারণে খাল-নালায় বর্জ্য ফেলা এবং নিয়মিত খাল-নালা থেকে মাটি উত্তোলন না করা।
সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে। সিডিএ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। একটি প্রকল্পও নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি সংস্থাগুলো। বারবার মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। এ নিয়ে নাগরিক সমাজ ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ রয়েছে।