চট্টগ্রাম নগরে স্বস্তির বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ
ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার রাত ৯টায় ভারী বর্ষণ শুরু হয়ে ১০টা পর্যন্ত চলে। এই এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরের শুলকবহর, কাপাসগোলা, বাদুড়তলা, চকবাজার, ডিসি রোড, কাতালগঞ্জসহ নগরের নিচু এলাকাগুলোর রাস্তাঘাট ও অলিগলিতে পানি জমে যায়।
তবে বুধবার দিনভর প্রচণ্ড গরমের কারণে অস্বস্তিতে থাকা মানুষদের স্বস্তি দিয়েছিল এই ভারী বর্ষণ। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে নগরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন মানুষ। এই সময় রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়৷
রাতের বেলায় চাকরি ও কাজ শেষে ঘরমুখী মানুষের কষ্টের শেষ ছিল না।
চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারের বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আবদুল হামিদ বুধবার রাত পৌনে ১১টায় প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর কর্মস্থল নগরের ডিসি রোড এলাকায়। রাতের বৃষ্টিতে সেখানে পানি জমে যায়। এর মধ্যে কষ্ট করে বাসায় ফেরেন। তবে সেখানেও এসে দেখেন গলিতে পানি জমে রয়েছে।
কয়েক দিন ধরে গরমের কারণে জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষজন বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশু-কিশোরেরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গরমের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নগরে লোডশেডিংও বেড়ে গেছে। নগরের প্রায় সব এলাকায় দিনে পাঁচ থেকে সাতবার বিদ্যুৎ যাচ্ছে। কোথাও কোথাও ৮-১০ বার বিদ্যুৎ যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। একেকবার বিদ্যুৎ গেলে আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টায় আসে না। গরমের সঙ্গে লোডশেডিং—এই নিয়ে চরম অস্বস্তিতে আছেন নগরের মানুষ। এরপর রাতে যুক্ত হয়েছে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ।
এদিকে নগরের জামালখান মোড়ের একটি বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে পড়ে রুফাইদা ওমর। মেয়েকে শ্রেণিকক্ষে পাঠিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছিলেন মা ইশরাত জাহান। প্রচণ্ড গরমে ঘামছিলেন। একটু স্বস্তির আশায় হাতে থাকা পেপার দিয়ে কোনোরকম বাতাস করছিলেন। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় কথা হয় ইশরাত জাহানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পড়াশোনার চেয়ে সন্তানের সুস্থতা বেশি জরুরি। কিন্তু যে গরম পড়ছে, তাতে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়বে। বাইরে অবস্থান করে নিজেই কাহিল হয়ে পড়ছেন। ভেতরে সন্তানের কী অবস্থা, তা ভেবে চিন্তা হচ্ছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক গাজী গোলাম মাওলা প্রথম আলোকে বলেন, গরমের তীব্রতা বৃদ্ধি এবং লোডশেডিং বাড়ার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে কেন্দ্রীয় কোনো সিদ্ধান্ত নেই। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছে।
মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়বৃষ্টি থাকায় গরমের তীব্রতা কমেছিল। একই সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও কমে যায়। ফলে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা থেকে কিছুটা মুক্তি পান মানুষ। কিন্তু গরমের তীব্রতা বাড়তে শুরু করায় আবার লোডশেডিংয়ের সমস্যা প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রামে চাহিদার তুলনায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা।
পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, এখন ঝড়বৃষ্টি নেই। তাই বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে প্রয়োজনের তুলনায় ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর চাহিদা ছিল দেড় হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া গেছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট।
নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার এ ব্লকের ২ নম্বর সড়কের বাসিন্দা স্বপন ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার রাত দুইটা থেকে বুধবার বেলা তিনটা পর্যন্ত তাঁদের বাসায় অন্তত ১০ বার বিদ্যুৎ গেছে। এই সময়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। যেভাবে গরম পড়ছে, তাতে তাঁর দুই বছর বয়সী ভাগনে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
পিডিবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের আওতায় ২৭টি বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ১১টি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এসব ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে ১ হাজার ৫২০ মেগাওয়াট। চট্টগ্রামে চালু বিদ্যুৎ ইউনিটগুলোতে মঙ্গলবার বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ২৫৮ মেগাওয়াট। অবশ্য চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও তা জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। সেখান থেকে চট্টগ্রামকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
পিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের সব ইউনিট চালু করা যাচ্ছে না। আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এ মুহূর্তে গ্যাস ও জ্বালানি-সংকট নিরসনের সম্ভাবনা কম।