তিনতলা ভবনটির নাম ‘জাহাঙ্গীর আলম কমপ্লেক্স’। তবে এরই মধ্যে বিপণিবিতানটিতে ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘শহীদ মুগ্ধ কমপ্লেক্স’ নামে। ভবনের দ্বিতীয় তলায় আরেকটি ব্যানারে উল্লেখ করা হয়েছে, এটি স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের আঞ্চলিক কার্যালয়। নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় এভাবেই এক আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন বিপণিবিতান দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
বিপণিবিতানটি অবস্থিত উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের ছমিরমুন্সিরহাট পশ্চিম বাজারে। গত বৃহস্পতিবার এসব ব্যানার টাঙানো হয়। বিপণিবিতানটির মালিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বীর বিক্রম শহীদ তরিক উল্যাহর জ্যেষ্ঠ সন্তান এবং এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক।
এদিকে ছমিরমুন্সিরহাট এলাকায় অবস্থিত বীর বিক্রম শহীদ তরিক উল্যাহ স্টেডিয়ামের নামও মুছে ফেলা হয়েছে। স্টেডিয়ামটির প্রবেশপথের ফটকে নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘শহীদ আবু সাঈদ স্টেডিয়াম’।
আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিনে জেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়কের ছমিরমুন্সিরহাটে ঢুকতেই সড়কের দক্ষিণ পাশে চোখে পড়ে বিপণিবিতানটি। দেখা যায়, বিপণিবিতানটির পশ্চিম ও উত্তর পাশের কাচগুলো ক্ষতবিক্ষত। তৃতীয় তলায় ছাদের সঙ্গে ব্যানার ঝোলানো ‘শহীদ মুগ্ধ কমপ্লেক্স, পানি লাগবে পানি’। স্থানীয় লোকজন জানান, গত সোমবার একদল লোক বিপণিবিতানটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। একই সময়ে বাজারের একটি বেসরকারি ব্যাংকেও হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়।
বিপণিবিতানের মালিক এস এম জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কখনো জনপ্রতিনিধি ছিলাম না। সব সময় পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করেছি, নিজের পরিশ্রমে উপার্জিত অর্থ মানুষের জন্য খরচ করেছি, কোনো দলবাজি করিনি। অথচ আমার বিপণিবিতান ও বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর করা হলো, বিপণিবিতানে দলীয় কার্যালয়ের ব্যানার টাঙানো হলো, নাম পরিবর্তনের ব্যানার টাঙানো হলো। এসব ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আমি বিষয়টি বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুককেও জানিয়েছি।’
ছমিরমুন্সিরহাট বাজার পেরিয়ে আনুমানিক আধা কিলোমিটার পূর্ব দিকে ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়কের উত্তর পাশে বীর বিক্রম শহীদ তরিক উল্যাহ স্টেডিয়াম। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একদল তরুণ গত বৃহস্পতিবার স্টেডিয়ামটির নাম মুছে ফেলেছেন। তাঁরা স্টেডিয়ামের নাম দিয়েছেন শহীদ আবু সাঈদ স্টেডিয়াম। ওই নামের একটি সাইনবোর্ড স্টেডিয়ামের প্রবেশপথে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বীর বিক্রম শহীদ তরিক উল্যাহ স্টেডিয়ামের আগে নাম ছিল সেনবাগ স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটি বিগত ২০০১-২০০৭ মেয়াদকালে তৎকালীন বিএনপির সরকার নির্মাণ করেছিল। এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে স্টেডিয়ামটির নামকরণ করা হয় বীর বিক্রম শহীদ তরিক উল্যাহ স্টেডিয়াম।
জানতে চাইলে কাবিলপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শেখ মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিপণিবিতানে দলীয় কার্যালয়ের ব্যানার টাঙানোর বিষয়টি তিনি শোনেননি। এ বিষয়ে খবর নিয়ে এ বিষয়ে মন্তব্য করবেন।
উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মোক্তার হোসেন বলেন, এসব বিষয়ে দলের নেতা-কর্মীদের কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। কেউ যদি অমান্য করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছমিরমুন্সিরহাটের বিষয়টি তিনি শিগগিরই সমাধানে কাজ করবেন। কোনো অনৈতিক কাজে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।